বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিদায়ী ইসির সাক্ষাৎকার

পাঁচ বছরে কোনো চাপ ছাড়াই কাজ করেছি

জাবেদ আলী

পাঁচ বছরে কোনো চাপ ছাড়াই কাজ করেছি

পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করল কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে গঠিত হয়েছে নতুন কমিশন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বিদায়ী দুই কমিশনার জানিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা। নিজেদের কাজের মূল্যায়ন ছাড়াও পরামর্শ দিয়েছেন নতুন ইসির জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বানী

 

বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী বলেছেন, ‘পাঁচ বছর খুব সুন্দর ও সহজেই চলে গেল। রাষ্ট্র যে দায়িত্ব দিয়েছিল তা যথাযথভাবে পালন করেছি। যতটুকু দেওয়া সম্ভব্য তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ জন্য নিজেকে হালকা লাগছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচ বছর বাহির বা ভেতরের কোনো চাপ ছাড়া কাজ করেছি। এর পরও আমাদের আজ্ঞাবহ বলা হয়েছে।’ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বিগত ইসির দায়িত্ব পালনকালে নানা অভিজ্ঞাতার কথা তুলে ধরেন। সুন্দর ও দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন করার বিষয়ে বলেছেন, ‘আমাদের পাশের বড় দেশ ভারতের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি যে তিনটি পয়েন্ট বলেছিলেন, আমি তা উল্লেখ করছি—যেটা দেশের জন্য ভালো হবে। তিনি বলেছেন—(১) ভারতের মিডিয়া এমন কোনো খবর দেবে না, যে খবরে কমিশনের কোনো ভাবমূর্তির ক্ষতি হয়। (২) প্রতিটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণযোগ্য বলে ওন (ধারণ) করে। (৩) ওই দেশের আদালত নির্বাচন কমিশনের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে।’ তিনি বলেন, ‘আমি কামনা করব, আমরা যদি এ তিনটি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখি, তাহলে অবশ্যই আমাদের কমিশন বা পরবর্তী কমিশন ভারতের মতোই দৃষ্টান্ত বা কাজ করতে সক্ষম হবে।’ জাবেদ আলী বলেন, ‘শুরুতে অনুষ্ঠিত পাঁচ সিটি নির্বাচনকে মিডিয়া বা কেউ ভালো বলেনি। আজ একটি নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হয়েছে। তারা শপথ নেওয়ার পর থেকে যদি সবাই তাদের পেছনে জোটবদ্ধভাবে লেগে যায়, যেটা কিনা আমাদের বেলায় হয়েছিল এবং কেউ বলতে পারবে না যে মিডিয়া বা বিরোধী দল আমাদের পক্ষে কথা বলেছে।’  তিনি বলেন, ২০১২ সালের ১০ নভেম্বর। তখনো কোনো নির্বাচন হয়নি। তখন আমরা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকেছিলাম। তার মধ্যে সাংবাদিকরাও ছিলেন। একজন সাংবাদিক সেদিন বলেছিলেন, আপনারা হয়তো চোখের জলে, নয়নের জলে এখন থেকে যাবেন। ওই দিন আমাদের কী অপরাধ ছিল তা আমরা বলতে পারছি না। আল্লাহর অশেষ রহমত, আমরা ফুরফুরে মন নিয়ে যাচ্ছি। আমরা চোখের জলে, নয়নের জলে ভাসিনি।’ জাবেদ আলী বলেন, ‘আমাদের টার্গেট ছিল সংবিধান সামনে রেখে আইন, আরপিও এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসরণ করে সবার সহযোগিতায় কাজ করা। এটাই আমরা করেছি। জাতির প্রত্যাশা অনেক বড়। অনেক বেশি। আমাদের ওপর যে দায়িত্ব ছিল তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করে জাতিকে খুশি করাই ছিল আমাদের কাজ। কিন্তু আমরা কতটুকু পেরেছি, তা আজ থেকে দুই-তিন বছর পরে মূল্যায়িত হবে। আমরা কী করে গেলাম।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা ইসিতে যে কজন ছিলাম, নতুন নতুন কিছু সমস্যা ছিল, আইন-সংবিধান ভালো বুঝতাম না। কিন্তু আমরা সিইসির আহ্বানে প্রায় সব আইন মুখস্থ করে ফেলেছি। আমরা চেষ্টা করেছি আইন মোতাবেক কাজ করার। সবার সহযোগিতায় ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা করার চেষ্টা আমরা করেছি।’ বিদায়ী এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা মনে করি, ইসি সম্মান অর্জন করতে পারে সবার সহযোগিতায়। যদি নতুন ইসি আগের কমিশনের অভিজ্ঞতা চান, তা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত থাকব।’ ইসি থেকে বিদায়ের পর কী করবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোরআনে ২৫ জন নবীর বর্ণনা আছে। আমি সেগুলো এক জায়গায় করেছি। সেই সংকলনটির ইংরেজি অনুবাদ বের করব আশা করছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর