রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সেতু নিয়ে দুর্ভোগে দুই জেলার চার উপজেলাবাসী

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্, শিবপুর-মনোহরদী (নরসিংদী) থেকে ফিরে

সেতু নিয়ে দুর্ভোগে দুই জেলার চার উপজেলাবাসী

ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুর ও নরসিংদী। এই গুরুত্বপূর্ণ দুই জেলাকে বিভক্ত করেছে শীতলক্ষ্যা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদ। এই শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়েছে বহু সেতু। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ দুই জেলার চার উপজেলার মিলনস্থল ব্রহ্মপুত্র-বানার-শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনা। এক পারে রয়েছে গাজীপুরের কাপাসিয়া ও কালীগঞ্জ উপজেলা। অন্য পারে নরসিংদীর শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলা। এ দুই জেলার চার উপজেলার হাজার হাজার সাধারণ মানুষ তিন নদীর মোহনা পাড়ি দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে আসছেন। এ তিন নদীর মোহনায় রয়েছে আকর্ষণীয় ধাঁধার চর নামের একটি পর্যটন এলাকা। এ গুরুত্বপূর্ণ তিন নদীর মোহনায় ত্রিমুখী সেতু এখন সময়ের দাবি। নরসিংদীর শিবপুর, মনোহরদী, পলাশ, বেলাবো, নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকার লাখো মানুষ শিবপুরের লাখপুর হয়ে নদী পাড়ি দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অতি অল্প সময়ে যাতায়াত করে আসছেন। শুধু তা-ই নয়, নরসিংদীর মনোহরদী, শিবপুরসহ বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের সহজে ঢাকা ও গাজীপুরে যাতায়াতের জন্য রয়েছে রানীগঞ্জ বাজার থেকে যাত্রীবাহী বাসের সার্ভিস। আর নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ভৈরবসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ এই তিন নদীর মোহনা পাড়ি দিয়ে যাত্রীবাহী বাসের মাধ্যমে দ্রুত রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করছেন। জানা গেছে, দেশের তাঁতশিল্পের রাজধানী খ্যাত নরসিংদীর লাখো মানুষের ব্যবসা, চাকরিসহ অন্যান্য কাজে গাজীপুরের সঙ্গে যোগাযোগ বেশ জরুরি। নরসিংদীর শিবপুর, মনোহরদী, পলাশের কাপড় ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক এলাকা গাজীপুর, মাওনা, কোনাবাড়ীসহ আশপাশ এলাকা। অন্যদিকে গাজীপুরের পোশাকশিল্পেরও বড় বাজার নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকা। এই দুই জেলার অল্প সময়ের যোগাযোগের সড়ক হলো গাজীপুরের কাপাসিয়া-রানীগঞ্জ হয়ে নরসিংদীর লাখপুর-শিমুলিয়া সড়ক। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে ব্রহ্মপুত্র-বানার-শীতলক্ষ্যা নদী নৌকাযোগে পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন মানুষ। কিন্তু শুধু একটি সেতুর জন্য তাদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট। শুধু তা-ই নয়, নদী পার হতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। সন্ধ্যা হলে এখানে নদী পার হওয়া যেন যুদ্ধের শামিল। অন্যদিকে শীতলক্ষ্যা-বানার নদীর উত্তর পারে রয়েছে গাজীপুরের কাপাসিয়ার একটি অংশ। সরেজমিন দেখা গেছে, নরসিংদীর লাখপুর বাজারের কাছেই ব্রহ্মপুত্র-বানার-শীতলক্ষ্যা তিন নদীর মোহনা। আর পশ্চিম পারে গাজীপুরের রানীগঞ্জ বাজার। রানীগঞ্জে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে লাখপুর বাজারের পাশেই রয়েছে একটি কলেজ। আর এই দুই পারের শত শত শিক্ষার্থী নদী পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। বিশেষ করে নদীর পশ্চিম পারে কাপাসিয়া কলেজে নরসিংদীর শিবপুর, মনোহরদী এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। যাতায়াত সম্পর্কে জানতে চাইলে লাখপুর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী তুরাগ নাজির বলেন, শুধু একটা সেতুর জন্য পুরো নরসিংদীর মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কাপাসিয়া কলেজের ছাত্রী নরসিংদীর শিবপুরের বাসিন্দা দিলরুবা জাহান বলেন, ‘নদীর ওপারেই রয়েছে রানীগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়ক। আর এই মহাসড়ক দিয়ে আমরা সহজে ঢাকায় যাতায়াত করে আসছি। তবে একটি সেতুর জন্য আমাদের অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে ৫০ মিনিট।’

গাজীপুরের দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ গাফ্ফার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র-বানার-শীতলক্ষ্যা তিন নদীর মোহনা হলেও দুই পারের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক বেশি। বিশেষ করে ওই পারের শিক্ষার্থীরা এই পারের স্কুল-কলেজে এসে পড়াশোনা করছে।

গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনিছুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। আশা করছি, উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে শিগগিরই নরসিংদীর লাখপুর ও গাজীপুরের রানীগঞ্জ এলাকায় একটি সেতু করবে সরকার।

সর্বশেষ খবর