বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

অর্থ ফেরতে আরও সময় চায় ফিলিপাইন

মানিক মুনতাসির

অর্থ ফেরতে আরও সময় চায় ফিলিপাইন

নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড) থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ ফেরতের বিষয়ে আরও সময় চেয়েছে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটি এ ঘটনার জন্য দায়ী সে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক আরসিবিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য এরই মধ্যে ফিলিপাইন থেকে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে মাত্র দেড় কোটি ডলার। বাকি আরও সাড়ে ৬ কোটি ডলার (৫১০ কোটি টাকা) ফেরতের ব্যাপারে কিছুটা সময় প্রয়োজন বলে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে এই রিজার্ভ চুরির ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেছে। গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) হাতিয়ে নেয় একটি হ্যাকার চক্র। এদিকে ফেডারেল রিজার্ভ, ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আরসিবিসির বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) এবং আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সূত্র জানায়, তদন্ত এবং টাকা ফেরতের মাঝপথে সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও এখন আবার আশার সঞ্চার হচ্ছে। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। এর আগে আরসিবিসি বলেছিল, অর্থ ফেরত দিতে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। ব্যাংকটির ওই বক্তব্যের ব্যাপারে ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের অবস্থান কিছুটা পাল্টে বাংলাদেশকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয় অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ কিংবা রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে। তবে তা হবে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তবে আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী এ টাকা ফেরত দিতে আরসিবিসি বাধ্য। এ ক্ষেত্রে ফেডের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। শুধু তা-ই নয়, এ ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত আইনজীবী। তবে এ ব্যাপারে দু-একজন আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এ ধরনের সমস্যার সমাধানে আন্তর্জাতিক লবিস্ট খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে বলে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র দেবপ্রসাদ দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে যে অর্থ জমা ছিল তা ফেরত এসেছে। এখন বাকি অর্থ ফেরতের বিষয়ে আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এখন আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ। তবে ফিলিপাইন আন্তরিক হলে দ্রুত ফেরত আনা যেতে পারে। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর ফেডারেল রিজার্ভ চাইলে আরসিবিসিকে অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কেননা আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি, দেশ বা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যবহার করে এক ডলার মানি লন্ডারিং করলে তার কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে জরিমানা আদায় করা হবে। তবে তা তদন্ত ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এদিকে চুরি হওয়া অর্থ আদায়ের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলেও এ ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিছু প্রক্রিয়ার পরিবর্তন আনা হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও উন্নত করা হচ্ছে। আগামী মাস থেকেই নতুন সফটওয়্যার যুক্ত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তায়। এ ছাড়া দেশের অন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোরও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তদারকিও বাড়ানো হয়েছে ব্যাংকগুলোর ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব কর্মকর্তাকে সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ করতে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের আওতায় আনার কাজ শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর