শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বলধা গার্ডেনে বিরল গাছ হুমকির মুখে

মোস্তফা কাজল

বলধা গার্ডেনে বিরল গাছ হুমকির মুখে

বলধা গার্ডেনে বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতিকে ধরে রেখেছে বিরল প্রজাতির তিন শতাধিক গাছ-গাছালি। এ বাগানে সব মিলিয়ে ৯৫০টি দুর্লভ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ শতাধিক সুস্থ থাকলেও ১৫০টি গাছের অবস্থা  যেনতেন। গতকাল সরেজমিন বলধা গার্ডেনে দেখা যায়, সাইকি ও সিবিলি উভয় বাগানের গাছগুলোতে ধুলা জমে আছে। সেচ ও পরিচর্যার অভাবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ১৯০৯ সালে বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন বলধা এস্টেটের জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী। শুরুতে দেশের বিরল লতাপাতা, ঝোপজাতীয় ঘরোয়া উদ্ভিদ, অর্কিড ও ক্যাকটাস রোপণ করেন। এই অংশের নাম দেন সাইকি বা আত্মা। ১৯৩৬ সালে এই অংশের গাছগুলোর বংশবিস্তারের জন্য আরও ৩ দশমিক ৮ একর জমি ব্যবহার করেন তিনি। এই অংশের নাম দেন সিবিলি বা প্রকৃতির দেবী। এখন বলধা গার্ডেন দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সরকারের বন বিভাগ। গার্ডেনের দায়িত্বে থাকা বন বিভাগের ফরেস্টার বশির আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংকটের মধ্যেও আমরা মূল্যবান গাছ-গাছালি সুস্থ রাখছি। ৮০০-এর  বেশি প্রজাতির গাছ এখনো সুস্থ রয়েছে। এদিকে বলধা গার্ডেনের বিরল উদ্ভিদ সংরক্ষণে মূল বাগান ঠিক রেখে এর আদলে আরও একটি বলধা গার্ডেন তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ও গবেষক মোকারম হোসেন। তিনি বলেন, বাগানটির বর্তমানে যে অবস্থা সেটি থেকে বের করে সমৃদ্ধ উদ্ভিদ প্রজাতিকে বাঁচাতে হলে এর আদলেই আরও একটি বাগান তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া প্রধান প্রধান গাছগুলো অক্ষত রেখে এবং বর্তমান বাগানকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে চারা-কলমের মাধ্যমে বাগানের গাছগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বলধা গার্ডেনের আদলে আরেকটি বাগান তৈরি করা যাবে। দেশের কোনো সুবিধাজনক স্থানে এই বাগানের সব উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে হুবহু আরেকটি বাগান তৈরি করে  দেশের শত বছরের ঐতিহ্য এই বাগানটি রক্ষা করা সম্ভব। সরেজমিন দেখা যায়, বালু জমে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া স্বর্ণ অশোক গাছের চূড়ায় সোনা রঙের ফুল ফুটেছে। দক্ষিণের উঁচু ভবনের ছায়ার কারণে বলধা গার্ডেনে এই বিরল গাছটির অবস্থা মৃত প্রায়। স্বর্ণ অশোকের মতোই বলধা গার্ডেনের কনকমুধা, রসুনদী, বিচিত্র বকুল, সুরভি, ভূতনাগিনী, উদয়পদ্ম, কণ্টকলতা, প্যাপিরাস, ধূপগাছ, শ্বেতশিমুলসহ অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ বিপদাপন্ন অবস্থায় টিকে আছে। এ ছাড়াও অসংখ্য বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে-নানা জাতের অর্কিড, জলজ উদ্ভিদ শাপলা, নীলপদ্ম, হলুদ শাপলা, আমাজান লিলি। এ ছাড়া তিন পাশে উঁচু ভবন থাকায় দিনের অধিকাংশ সময় রোদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ বাগান। মাঝে উঁচু গাছগুলো বড় হওয়ায় নিচের দেশ-বিদেশের বিরল গাছগুলোকে কোনো রকমে টিকে থাকতে দেখা যায়। প্রতিটি গাছের গায়ে পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে টিনের নামফলক। পেরেক ঠোকা স্থানগুলোতে পচন ধরেছে। সিবিলি অংশে ঢুকতেই চোখে পড়বে উদয়পদ্ম গাছের টিনের নামফলক ঢুকে গেছে গাছের শরীরের ভিতরে। আরও ভিতরে হাঁটতে থাকলে চোখে পড়বে জলজ উদ্ভিদের  চৌবাচ্চাগুলো। সূর্যঘড়ির সামনের চৌবাচ্চায় সদ্য মারা গেছে জলজ উদ্ভিদ। বাগানের পুরোটা ঘুরে চোখে পড়ল শুধু ঝাড়ু দেওয়া ছাড়া আর কোনো পরিচর্যাই হয়নি। দেওয়া হয়নি  সেচ। সিবিলি অংশের ইজারাদার সিরাজুল রহমান অভিযোগ করেন, বাগানের কোনো পরিচর্যাই হয় না। সকালে শুধু ঝাড়ু  দেওয়া হয়। ঝরে পড়া পাতা তুলতে কষ্ট হয় বলে বাগানের ভিতরেই মালিরা আগুন দেয়। বাগানে বেশ কয়েক বছর ধরে হাঁটতে আসা আরাফাত আলী জানান, চারপাশে উঁচু ভবন ও রাস্তা করায় বাগান অনেক নিচু হয়ে গেছে। বর্ষায় অনেক  নোংরা পানি ও বর্জ্য ঢোকে। পরে পানি চলে গেলেও বর্জ্যগুলো বাগানে রয়ে যায়। এই বর্জ্য গাছের জন্য ক্ষতিকর। এসব কারণে উদ্ভিদবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।  বেড়াতে আসা রাকিবুল হক জানান, বাগানে সারা দিন  লোকের ভিড় থাকে। দর্শনার্থীদের বিক্ষিপ্ত পদচারণায় বাগানের গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর