রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ওদের টার্গেট নও মুসলিম আর স্বল্পশিক্ষিত যুবক

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ওদের টার্গেট নও মুসলিম আর স্বল্পশিক্ষিত যুবক

‘নও মুসলিম’ (যারা ধর্মত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে) আর স্বল্প শিক্ষিত যুবকদের টার্গেট করে মাঠে নেমেছে আনসার উল্লাহ বাংলাটিম, জেএমবিসহ জঙ্গি সংগঠনগুলো। ওদের ফাঁদে পা দিয়ে এরই মধ্যে অনেকে জড়িয়ে পড়েছেন জঙ্গিবাদে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন ধর্মান্তরিতদের অনেকে। গ্রেফতারও হয়েছেন কেউ কেউ। গ্রেফতার হওয়াদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রশাসন পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ধর্মান্তরিত এবং অল্প শিক্ষিত যুবকরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়াকে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘বিগত সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, অল্প শিক্ষিত এবং অন্য ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হওয়াদের মগজ ধোলাই সহজে করা যায়। নানা প্রলোভন দিয়ে তাদের দলে টানা যায়।’

বিগত সময়ে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে ছিলেন এমন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের। ওই পুলিশ সদস্যরা জানান, অন্য ধর্ম থেকে এসে মুসলিম হওয়া এবং অল্প শিক্ষিতরা কোরআন হাদিসের অপব্যাখা করা অনুবাদ সহজে বিশ্বাস করে। কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন করে না। তাদের কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কেও ভুল ব্যাখ্যা দিলে কোনো প্রশ্ন করে না। সংগঠন থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, তা-ই মেনে নেয়। তাই এ দুই শ্রেণির লোকজন সংগঠনে টানার জন্য টার্গেট করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বেশি সক্রিয়। তাই প্রশাসনকে ফাঁকি দিতে হিন্দুসহ ভিন্ন সম্প্রদায়ের যুবকদের টার্গেট করছে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন মৌসুমী আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে কালো তালিকাভুক্ত সংগঠন ‘ইসলামী সমাজ’র ২৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম ধর্মান্তরিত যুবক। তার আগের নাম ছিল কৃষ্ণানন্দ দে। তিনি বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপের সুরঞ্জিত দে’র ছেলে। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরে ইসলামী সমাজে যোগদান করেন। নগরীর মনছুরাবাদ এলাকায় বসবাস করতেন। গত বছরের ১১ জুলাই সীতাকুণ্ডে অভিযান চালিয়ে আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) চার সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সংগঠনটির বায়তুল মাল সম্পাদক মুছা ইবনে উমায়েরও রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া উমায়ের এক সময় সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন। তখন তার নাম ছিল পিকুল দাশ। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছনহরা গ্রামে। তার বাবার নাম অরুণ কান্তি দাশ। ২০১৪ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নতুন নাম ধারণ করেন মুছা ইবনে উমায়ের। একই সময়ে তিনি এবিটিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে এ সংগঠনটির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বায়তুল মাল সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার অভিযুক্ত সাইফুল্লাহ ওজাকিও একজন নও মুসলিম। ২০০২ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য জাপান যান সাইফুল্লাহ ওজাকি। সেখানেই ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালে হঠাৎ উধাও হন সাইফুল্লাহ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, নিজে থেকেই নিখোঁজ হয়ে নব্য জেএমবিতে যোগদান করেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার জিনদপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল সুজিত দেবনাথ। বাবার নাম জনার্দন দেবনাথ।

সর্বশেষ খবর