সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

শেরেবাংলা নগরে সচিবালয় স্থানান্তর প্রকল্প ফাইলবন্দী

লুই আই কানের মূল নকশার জন্য আটকে আছে সব

নিজামুল হক বিপুল

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়কে শেরেবাংলা নগরে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। সচিবালয় সরিয়ে নিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ২০১৫ সালের সভায় প্রস্তাব তোলা হলেও লুই আই কানের মূল নকশাসহ উপস্থাপন না করায় একনেক প্রস্তাবটি ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তারপর থেকে এই প্রসঙ্গটি প্রায় ফাইলবন্দী হয়ে আছে। জানা গেছে, রমনায় সচিবালয় সম্প্রসারণের জায়গা না থাকায় শেরেবাংলা নগরে বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার মাঠ ও চন্দ্রিমা উদ্যানের কিছু জায়গা নিয়ে ৩২ একর জমির ওপর নতুন জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের প্রকল্প নেয় সরকার। যাতে চারটি ব্লকে ভাগ করে জাতীয় সচিবালয় কমপ্লেক্স নির্মাণের কথা বলা হয়। এর মধ্যে দুটি বড় ব্লকে ৩২টি বড় মন্ত্রণালয় এবং দুটি ব্লকে ১৬টি ছোট মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। প্রস্তাবিত সচিবালয়ের মূল ভবনের আয়তন হবে প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার ৩১০ বর্গমিটার। এর সঙ্গে থাকবে ৫৪ হাজার ৫০৫ বর্গমিটার অ্যাসোসিয়েটস ভবন, ৫ হাজার ৮৪৩ বর্গমিটার অডিটরিয়াম ও হলরুম, ২৪ হাজার ৭২৯ বর্গমিটার মসজিদ আর্কেড ও সমবায় ভবন, ১ হাজার ৩৮ বর্গমিটার এন্ট্রান্স প্লাজা, ৫ হাজার ২০০ বর্গমিটার চিলার রুম, ৬৮ হাজার ২৩৪ বর্গমিটারের সড়ক এবং ১ হাজার ৭৭২ মিটার সীমানাপ্রাচীর। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়, নতুন সচিবালয় গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে দুই হাজার ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রস্তাবটি ২০১৫ সালের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার আগে আমাদের লুই আই কানের মূল নকশা এনে দেখতে হবে। আমাদের কাছে যে অনুলিপি আছে তাতে মূল নকশার বিচ্যুতি হচ্ছে কি না দেখতে হবে। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, মূল নকশা পাওয়ার পর এ প্রকল্প আবার একনেকে উপস্থাপনের। ওই সভার পর পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, একনেক সভায় এ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন রকম সুপারিশ এসেছে। এ কারণেই লুই কানের মূল নকশা অনুসরণ করতে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি আপাতত ঝুলে গেছে বলেও ওই সময় মন্তব্য করেন তিনি। তারপর প্রায় সোয়া এক বছর পার হলেও শেরেবাংলা নগরে নতুন সচিবালয় স্থাপনের বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নতুন করে কোনো প্রস্তাবও একনেকে ওঠানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন সচিবালয় স্থাপন প্রকল্পের আগে কোনো প্রাক-মূল্যায়ন করা হয়নি। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিদ্যমান জনবল কাঠামো অনুযায়ী অফিসের জন্য কী পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন সে বিষয়ে ডিপিপিতে কোনো কিছু উল্লেখ করা হয়নি। শেরেবাংলা নগরে ৩২ একর জমির ওপর নতুন জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের এ প্রস্তাবটি ২০১৫ সালের ৬ জুন পরিকল্পনা কমিশনের প্রাক-মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় তোলা হয়। তখন সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করায় আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় জুলাই মাসে প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। তারপরই প্রকল্প প্রস্তাবনাটি একনেকে তোলা হয়। শেরেবাংলা নগরে নতুন সচিবালয় স্থাপনের জন্য ১৯৭৪ সালে ১০টি ব্লকে চারটি ৯ তলা ভবনসহ অফিস, ব্যাংক, অডিটরিয়াম, মসজিদ, কার পার্কিং সংবলিত জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড উইজডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে চুক্তিও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পটি নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এরপর প্রায় ২০ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবারও উদ্যোগ নেওয়া হয়। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ই যদি স্থানান্তর করবে তাহলে বর্তমান সচিবালয় প্রাঙ্গণে নতুন ২০ তলা ভবন হচ্ছে কেন? তিনি বলেন, আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই সচিবালয় শেরেবাংলা নগরে স্থানান্তরের।

সর্বশেষ খবর