বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রংপুর এখন উৎসবের নগরী

মেয়র পদে ১৩, কাউন্সিলর ২২৬ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬৭ জন নারীর মনোনয়ন জমা সেনাবাহিনী মোতায়েনে সিদ্ধান্ত হয়নি : নির্বাচন কমিশনার

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও শাহজাদা মিয়া আজাদ, রংপুর থেকে

রংপুর এখন উৎসবের নগরী

রংপুর এখন উৎসবের নগরী। আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন। শীতের মধ্যে ভোটের উত্তাপ বইছে পুরো নগরীতেই। কে হচ্ছেন নতুন নগরপিতা—এই প্রশ্নেই চায়ের কাপে ঝড় উঠছে। আওয়ামী লীগের ঝন্টু না নগরপিতা পরিবর্তন—এ নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও এরই মধ্যে ভোটযুদ্ধে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ভোটারদের মন জয় করতে বিরামহীন গণসংযোগ ও প্রচারে ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আর কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ নিজ ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট চাইছেন। বড় দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতারাও যাবেন মাঠে। তাই দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও চাঙ্গাভাব। গতকাল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে মেয়র পদে ১৩ জন, ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন এবং ৩৩টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের আশপাশের এলাকা নির্বাচনী উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির পক্ষ থেকে শিগগিরই কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি গঠন করে রংপরে নির্বাচনী ক্যাম্প তৈরি করা হবে।

১৩ মেয়র প্রার্থী : রসিক নির্বাচনে মেয়র পদে একজন নারীসহ ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন গতকাল উৎসবমুখর পরিবেশে মেয়র ও কাউন্সিলররা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দল মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা হলেন—আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, বিএনপির কাওসার জামান বাবলা, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বাসদের আবদুল কুদ্দুস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম  আখতার। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবদুর রউফ মানিক, জেলা যুবদলের নাজমুল আলম নাজু, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ বীরপ্রতীক, ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান রনি, শাকিল রায়হান ও সমাজ উন্নয়ন কর্মী সুইটি আনজুম মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদিকে ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন এবং ৩৩টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন বলে রিটার্নিং ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন। তিনি জানান, মনোনয়ন বাছাই হবে ২৫ থেকে ২৬ নভেম্বর। বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ২৭ থেকে ২৯ নভেম্বর এবং অপিল নিষ্পত্তি হবে ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৩ ডিসেম্বর।

শীতেও ঘাম ঝরছে মেয়র প্রার্থীদের : প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই শুরু হবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা। তাই বলে প্রার্থীরা বসে নেই। মেয়র প্রার্থীদের দিন-রাত গণসংযোগ অব্যাহত রাখায় জমে উঠেছে নির্বাচনী পরিবেশ। পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজারের চায়ের দোকানগুলোয় বিচ্ছিন্ন আলোচনায় শুধু সিটি নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে। আর প্রার্থীরা স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন ও সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ততা প্রমাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু গতকাল নগরীর গুপ্তপাড়া, মাহিগঞ্জ ও বুড়িরহাট এলাকায় গণসংযোগ ও উঠোন বৈঠক করেন। কাওসার জামান বাবলা মাহিগঞ্জ ও খাসবাগ এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা তার নির্বাচনী কার্যালয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী সভা করেন। শাহরিয়ার আসিফ ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ ও উঠোন বৈঠক করেন। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীরাও গণসংযোগ করেছেন।

থেমে নেই কাউন্সিলররাও : কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা নিজ নিজ ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট চাইছেন। ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাফিজ আহমেদ ছুট্টু বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লা ও অলি-গলিতে গণসংযোগ এবং ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করছি। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম জানান, কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছি। ২৮, ২৯ ও ৩০ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ফরিদা কালাম বলেন, পৌরসভায় দুবার ও সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এবার ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ও দোয়া চাইছি।

আসিফকে ঢাকায় তলব : জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে মেয়র পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফকে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকায় তলব করেছেন বলে দলের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, গতকাল বনানীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এরশাদ ছাড়াও মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও ফয়সল চিশতী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এরশাদ দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এরশাদ তার কাছে জানতে চান তিনি শাহরিয়ার আসিফের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন কিনা। উত্তরে রাঙ্গা জানান, শাহরিয়ার আসিফের প্রতি তার সমর্থন নেই। পরে এরশাদ মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজারের পক্ষে বিবৃতি দিতে বলেন।

রসিক নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়নি : নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট। তিনি গতকাল দুপুরে ঢাকার সাভার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত উপজেলা নির্বাচন কমিশনের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ভোটাররা যেন নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সেজন্য নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে। তিনি নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েনের বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় এলে পরিবেশ-পরিস্থিতিই বলে দেবে তখন কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে আমি মনে করি, এক বছর আগেই এ বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় হয়নি। অবশ্যই আমরা পরিবেশ-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে যা করা দরকার সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ, ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল, সাভার উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল আলম সমর, ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহম্মেদ ভূইয়া, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমিনুর রহমান মিঞা প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর