বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকট দ্বিপক্ষীয় সমাধানের চেষ্টা চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পক্ষে এনে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট অবসানে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের জোর সমর্থন আদায়ে সফল হয়েছে। আমরা কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

জাতীয় সংসদে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমানের (খুলনা-২) লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান সরকারপ্রধান। শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে থাকা মিয়ানমারও দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পক্ষপাতী। তবে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে আসা ১০ লাখ নাগরিককে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে তাদের গড়িমসিও প্রকাশ পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ একটি খসড়া হস্তান্তর করেছে। এটি নিয়ে দুই দেশই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এক দিন আগেই বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।

স্বচ্ছতার অভাব থাকলে দুর্নীতির শিকড়টা গেড়ে যায় : জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশে মিলিটারি ডিকটেটরশিপ চলে, যে দেশে অবাধ গণতন্ত্রের অভাব থাকে, যে দেশে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতার অভাব থাকে— সেই দেশে দুর্নীতিটা শিকড় গেড়ে যায়। সেই শিকড় উপড়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়। ১৯৭৫-এর পর থেকে একুশটা বছরই আমাদের দেশে এই অবস্থা বিরাজমান ছিল। এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত একই অবস্থা। অর্থাৎ আমার লিগেসিটা কী? আমি উত্তরাধিকারসূত্রে কী পেয়েছি? পেয়েছি স্বৈরশাসন, অনিয়ম, অবিচার, অত্যাচার, জেল-জুলুম, দুর্নীতি। যে কারণে এই দুর্নামের এখনো ভাগিদার হতে হচ্ছে। অথচ দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করছি। প্রশ্নকর্তা পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্সের গবেষণায় প্রকাশিত ফলাফল জাতীয় সংসদকে অবহিত করে বলেন, সততার ক্ষেত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিশ্বে তৃতীয় হয়েছেন। এ ছাড়া কর্মক্ষম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বিশ্বে চতুর্থ স্থান লাভ করেছেন। সব বিষয়েই তিনি ভালো পয়েন্ট পেয়েছেন কিন্তু সরকারের কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের কারণে তিনি কিছু পয়েন্ট কম পান। ফখরুল ইমাম পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্সের গবেষণাপত্র থেকে উদ্ধৃত করে সংসদকে জানান, দেখা গেছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশের বাইরে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। বেতন ছাড়া তার সম্পদের স্থিতিতে কোনো সংযুক্তি নেই। কোনো গোপন সম্পদ নেই। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ৭৮ ভাগ মানুষ মনে করেন সৎ এবং ব্যক্তিগত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে। তবে, তার সরকারের বিরুদ্ধে কিছু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কী পেলাম, কী পেলাম না সেই হিসাব মেলাতে আমি আসিনি। সেই হিসাবটাও আমার নাই।

আমার একটাই হিসাব এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কতটুকু কাজ করতে পারলাম, সেটাই আমার কাছে বড়। তিনি বলেন, আমি নিজে সততার সঙ্গে দেশ চালাতে চেষ্টা করছি। আমি মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে, জীবনকে বাজি রেখে বাংলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আমি নিজের জীবনে টাকা পয়সা আছে কিনা তা কখনো চিন্তাও করি না। ওটা নিয়ে আমার কোনো দুশ্চিন্তাও নাই। এ সময় স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, একটি কথা মনে রাখবেন, মাথায় পচন ধরলে সারা শরীরেই ধরে। যেহেতু মাথায় পচন নাই, শরীরে কোথাও একটু আধটু ঘা-টা থাকে সেগুলো আমরা শেষ করতে পারব। তিনি বলেন, ওই রকম যদি দুর্নীতি হতো তাহলে বাংলাদেশে জিডিপি ৭ দশমিক ২৮ ভাগ হতো না। বড় বড় দুর্নীতি যদি হতো মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হতো না। এত বড় বড় জিনিস অল্প সময়ে তৈরি করা সম্ভব হতো না। এই দুর্নীতিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে কিন্তু আমরা পদ্মা সেতু তৈরি করছি। সততাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু) দেশটাকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়বেন। আমার একটাই চ্যালেঞ্জ যে কাজটা আমার বাবা করে যেতে পারেননি সেই কাজটা আমি সম্পন্ন করব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর