রবিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সর্বাধুনিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

জিন্নাতুন নূর, পায়রা (পটুয়াখালী) থেকে ফিরে

দেশের এ যাবত নির্মিত সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরিতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে এখানকার ধানখালী ইউনিয়নে নির্মিত হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াটের পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখানে কয়লার পাশাপাশি জ্বালানি হিসেবে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যবহৃত হবে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্প এলাকার ৩১ শতাংশ কাজ শেষ। আশা করা হচ্ছে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। আর এ কেন্দ্র থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে একই বছরের অক্টোবরের শেষ নাগাদ। প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাজার একরের ওপর স্থানজুড়ে চলছে প্রকল্পটির বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। পুরো এলাকা আগেই দেয়াল তুলে ঘিরে রাখা হয়েছে। এ এলাকায় থাকা বাসিন্দাদের পাশেই পাকা ঘর তুলে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য এরই মধ্যে অফিস কক্ষসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এগিয়ে চলেছে অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, অর্থাৎ যেখানে বয়লার বসানো হবে, এর উচ্চতা হবে ৮০ মিটার। ইস্পাতে নির্মিত সেই অবকাঠামো নির্মাণের অর্ধেক কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার মানুষ এখানে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিচ্ছন্ন কয়লা প্রযুক্তিসম্পন্ন ও পরিবেশবান্ধব হবে। পায়রা বন্দর নির্মাণের আগেই আমদানি করা কয়লা খালাসের জন্য এখানে একটি নিজস্ব জেটি নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আনা নির্মাণসামগ্রী অত্যাধুনিক ক্রেনের মাধ্যমে নামিয়ে ট্রাকযোগে প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুক্রবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অগ্রগতি পরিদর্শনে এসে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে এ পর্যন্ত নির্মিত হতে যাওয়া সবচেয়ে বড় পাওয়ার হাব এটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পায়রায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের কথা চিন্তা করেন। পদ্মা সেতু তৈরি হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। আর পায়রা থেকে আমরা প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। তবে এ স্থান থেকে শুধু কয়লা দিয়ে নয়, আমরা এলএনজি থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করব। আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সময়। দ্রুততম সময়ে এ অঞ্চলে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাইছি। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম পড়বে আট সেন্টের মতো। আমরা বলতে পারি বিদ্যুৎ খাতে যত বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলছে, এর মধ্যে পায়রা থেকেই সবার আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসবে। আশা করছি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে আমরা এই কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব। আর অক্টোবরের শেষ নাগাদ এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাব ১৩২০ মেগাওয়াট।’

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পরিবেশের সুরক্ষার কথা ভাবলে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এর মধ্যে সবেচেয়ে নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। কয়লার ক্ষতিকর সালফার প্রতিটি স্তরে কমানোর চেষ্টা করছি আমরা। আর কয়লা থেকে যে ধোঁয়া হবে তা ৯৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে নাইট্রোজেন অক্সাইডও কমানোর চেষ্টা করব। এর জ্বালানি হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। চীন-বাংলাদেশ উভয় দেশ এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে খরচ হবে ১২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা, সরকারকে যার ৮০ শতাংশ ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট মহল বহন করবে।

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) দেওয়া তথ্যে, ভবিষ্যতে একই স্থানে অভিন্ন ক্যাপাসিটি ও প্রযুক্তির আরেকটি মেগা প্রকল্প ও ১০০ মেগাওয়াট সৌর এবং ৫০ মেগাওয়াট বায়ুচালিত প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আছে। দেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) যৌথভাবে সমান অংশীদারিতে বিসিপিসিএল গঠন করে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিসিপিসিএল এবং এনইপিসি ও সিইসিসি, চায়নার কনসোর্টিয়ামের মধ্যে ইপিসি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর