শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

সম্ভাবনার সাদা পাঙ্গাশ

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

সম্ভাবনার সাদা পাঙ্গাশ

বিশ্ব বাজারে চর্বিযুক্ত গন্ধহীন সাদা মাংসল পাঙ্গাশ বা হোয়াইট মাংসল পাঙ্গাশের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। পাঙ্গাশের নতুন এ জাতটিকে পুঁজি করে  ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করে আছে ভিয়েতনাম। কিন্ত নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে থাই লাল পাঙ্গাশ। যা পশ্চিমা বিশ্বে চাহিদা নেই বললেই চলে। তবে আশার কথা এখন দেশই উৎপাদিত হবে সাদা মাংসল পাঙ্গাশ। এতে করে দেশে উন্মুক্ত হতে পারে আরেকটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ভিয়েতনামের পরই রপ্তানিতে নাম উঠতে পারে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের পাঙ্গাশকে রপ্তানী করার লক্ষ্যে এর লাল রংকে সাদা রং এ রূপান্তরের গবেষণায় সম্প্রতি বাংলাদেশ মত্স্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এর বিজ্ঞানীরা সফলতা অর্জন করেছেন। এতে করে দেশে উৎপাদিত স্বল্প মূল্যের থাই পাঙ্গাশকে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন মাত্রা সংযোজন হবে।  

জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জলাশয়ে থাই পাঙ্গাশ চাষ করা হয় এবং দেশের মোট মত্স্য উৎপাদনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে পাঙ্গাশের অবদান। গত অর্থ বছরে উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন। এই হিসেবে একই পরিমাণ জলাশয়ে সাদা পাঙ্গাশ চাষ করলে উৎপাদন হবে প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন। এতে করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বিএফআরআই জানায়, পাঙ্গাশ মাছের রং লাল হওয়ার মূল কারণ সরবরাহকৃত সম্পূরক মাছের খাবার। খাবারে জ্যান্থোফিল সমৃদ্ধ উপাদানের উপস্থিতির কারণেই মাছের ফিলের হলুদ রং সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মিট অ্যান্ড বোন মিল মিশ্রিত খাবারে উপস্থিত মায়োগ্লোবিন মাছের ফিলের রং লাল হওয়ার জন্যও অনেকটা দায়ী। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে ইনস্টিটিউট এর ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রের খাদ্য ও পুষ্টি গবেষণা বিভাগ পাঙ্গাশ মাছের ফিলের রং সাদা করার বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে প্রাথমিকভাবে সফলতা পায়। মাছের ফিলের রং পরিবর্তনের লক্ষ্যে সম্পূরক খাদ্য উপাদানের প্রভাব নির্ধারণের জন্য চার ধরনের সম্পূরক খাদ্য (ডায়েট -১, ভুট্টা  এবং মিট অ্যান্ড বোন মিল সমৃদ্ধ; ডায়েট-২, মিট অ্যান্ড বোন মিল ব্যতীত; ডায়েট-৩, ভুট্টা ব্যতীত, ডায়েট-৪,ভট্টা এবং মিট অ্যান্ড বোন মিল ব্যতীত) নিয়ে গবেষণা করার পরই সফলতা পায় সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা। ল্যাবরেটরি পর্যায়ে চলমান গবেষণা থেকে জানা যায়, চার মাস মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষণে প্রতিটি সাদা পাঙ্গাশের গড় ওজন হয়েছে ৭০০ গ্রাম। যা এক বছরে এক কেজিরও বেশি হবে। আঁশটে গন্ধও থাকে না। খাবারও অনেক কম লাগে। এদের ঘনত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এক একরে প্রায় ২৫ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, দেশে থাই পাঙ্গাশের ব্যাপক চাষের কারণে এর কাঙ্ক্ষিত মূল্য চাষিরা পাচ্ছেন না। থাই পাঙ্গাশের লাল ফিলেকে সাদা করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হলে চাষিরা অধিক লাভবান হবেন। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারও দখল করে নেবে বাংলাদেশে উৎপাদিত সাদা মাংসল পাঙ্গাশ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর