বৃহস্পতিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনী টার্গেটে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগের ১৪ টিম

রফিকুল ইসলাম রনি

সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থাকায় ঘর গোছানোর মিশন নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে ১২ জানুয়ারি থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১৪ টিম সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে যাচ্ছে। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার, কর্মীদের চাঙ্গাসহ দলের সাংগঠনিক গতি বাড়াতে কাজ করবেন তারা। বিভিন্ন জেলায় তারা কর্মিসভা ও জনসভা করবেন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন এলাকা সফর করবেন। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন তিনি। ইতিমধ্যে যশোরের জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়ামের সর্বশেষ বৈঠকে সাংগঠনিক সফরের সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের জেলা ও বিভাগীয় দায়িত্ব নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী প্রেসিডিয়াম সদস্যদের প্রধান করে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়ে ১৪টি টিম গঠন করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ পালন করা হবে। এ ছাড়া ১০ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠান থাকায় নেতারা ঢাকার কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। আগামী শনিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক এবং সোমবার দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক ডাকা হয়েছে। তাই ১২ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী সফরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘১২ জানুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগের ১৪টি টিম সারা দেশ সফর করবে। আমাদের লক্ষ্য নির্বাচনে হ্যাটট্রিক জয়ী হওয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে টিমের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা প্রথমে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনকে গুরুত্ব দেবেন। এরপর সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।’ বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতির প্রভাব সম্পর্কেও অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি। দলের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের প্রধান করে টিম গঠনের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তা সম্পন্ন করে সভানেত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছেন। আশা করছি, খুব শিগগির তা অনুমোদন করবেন দলীয় সভানেত্রী।’ সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফরে বের হতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে আওয়ামী লীগের পক্ষে সমর্থন বাড়াতে হবে। মানুষকে বিএনপি-জামায়াতের অতীতের দুঃশাসনের পাশাপাশি সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিষয় এবং তারা আবারও ক্ষমতায় গেলে দেশের কী ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে, সে বিষয়ে বোঝাতে হবে। দলের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কৌশলের কারণে আগামীতে আবারও দল ক্ষমতায় আসবে বলে নেতা-কর্মীরা ধারণা করছেন। সেজন্য মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও অনেকটা নির্ভার বসে আছেন। যার উল্টো ফল হচ্ছে নির্বাচনে। সর্বশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থীর বিজয় হবে বলে আত্মবিশ্বাসী ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু নির্বাচনে দলের প্রার্থীর ভরাডুবিতে অবাক হয়েছেন তারা। এমন প্রেক্ষাপটে সরকারি দলের সর্বোচ্চ ফোরামের বৈঠকে দলের প্রধান শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের অতি আত্মবিশ্বাসী হতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটি নির্বাচনের পর আমরা আরেকটি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিই। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে ১২ জানুয়ারি জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করব। এ সফরে আমাদের প্রথম ধাপ হবে দলের অভ্যন্তরে ছোটখাটো বিরোধ নিরসন, এরপর সরকারের উন্নয়নগুলো গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া।’

সর্বশেষ খবর