শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দর্শনার্থীর ভিড়

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে দর্শনার্থীর ভিড়

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধবিহার নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। আদি নাম সোমপুর বিহার। এটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত। যা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে অনেক আগেই। দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে নতুন করে গড়ে তোলা

হয়েছে নানা অবকাঠামো। বাড়ানো হয়েছে পর্যটন পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই উপচে পড়া ভিড়েও দর্শনার্থীরা পেয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। জানা যায়, পালবংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল অষ্টম শতকের শেষের দিকে এ বিহারটি নির্মাণ করেছিলেন। এ বিহারটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হওযার আগে পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত তদানীন্তন পাহাড় (গোপালের চিতা) নামে এটি পরিচিত ছিল। ১৯২৩-১৯৩৪ সালে প্রত্নতত্ত্ব খননের ফলে এই ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। এরপর এ প্রত্নস্থলে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ (মাঝখানে ১৯৮৬-৮৭ বাদ দিয়ে) সাল পর্যন্ত একাধিকবার প্রত্নতত্ত্ব খনন পরিচালিত হয়।

 এর ফলে স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। সেকালে ধ্বংসাবশেষটিকে মঠ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পূর্ববর্তী জৈন বিহারটির ধ্বংসাবশেষের ওপর একটি বৌদ্ধ মহাবিহার নির্মিত হয়েছিল। এই মহাবিহারটির নির্মাণ কাজে পূর্ববর্তী ধ্বংসাবশেষটির বহু নির্মাণ উপকরণ পুনর্ব্যবহার করা হয়েছিল। এসব উপকরণের মধ্যে কয়েকটি ভাস্কর্য উল্লেখযোগ্য। ওইসব ভাস্কর্যে খ্রিস্টাব্দ ছয়-সাত শতকের প্রচলিত শৈল্পিক ধারা বিদ্যমান ছিল। অথচ বৌদ্ধবিহারটি বরেন্দ্র ভূখণ্ডের পালবংশীয় দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল বিক্রম শীলের (খ্রিস্টাব্দ ৭৭১-৮১০) আমলে নির্মিত হয়েছিল। তৎকালে এটির পরিচিতি ছিল সোমপুর বা চাঁদের লোকালয় নামে। বর্তমানে যেটুকু অংশ টিকে আছে তা কেবল নিচের অংশের অংশবিশেষ মাত্র। এতে মোট ১১৭টি কক্ষ ছিল। চত্বরের মাঝখানে একটি প্রধান মন্দির ছিল। মন্দিরটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট, প্রস্থ ৩৫০ ফুট এবং উচ্চতা ৭০ ফুট। কালের পরিক্রমায় মন্দিরের সবচেয়ে ওপরের অংশ ধসে গেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারের নকশা সবচেয়ে সেরা। কারও কারও মতে এখানে একটি জৈন মন্দির ছিল। আর সেই মন্দিরের ওপরেই গড়ে তোলা হয়েছে এ বিহার। বিহারে ১৩-১৪ ফুট আকারের ১৭৭টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলোর সামনে টানা বারান্দা। ওপরে প্রায় ১০ ফুট চওড়া ছাদ। এখানে এক সময় যে নদী ছিল তার চিহ্ন দেখলেই বোঝা যায়। নদীর ঘাট সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে এই ঘাটে মৈদলন রাজার কন্যা সন্ধ্যাবতী স্নান করতেন বলে এ ঘাটের নাম ছিল সন্ধ্যাবতীর ঘাট। এক দিন নদীর স্রোতে ভেসে আসা জবা ফুলে ঘ্রাণ নেওয়ার পরে সন্ধ্যাবতী গর্ভবতী হন এবং পরবর্তীতে ছেলে সন্তান প্রসব করেন।

এ বিষয়ে পাহাড়পুর জাদুঘরের সহকারী পরিচালক ছাদেকুজ্জামান বলেন, প্রতিদিনই বৌদ্ধবিহারে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সরকারের রাজস্বও। সেই সঙ্গে ব্যাপক নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর