অনার্সের ছাত্রী মিশুর (ছদ্মনাম) মোবাইল ফোনে কল আসে। তিনি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বলছেন, গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছি। মিশুকে ইমপ্রেস করতে নানাভাবে কথা বলে বিশ্বাস অর্জন করে নেন লোকটি। এরপর লটারি জয়ের কথা বলে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় বেশকিছু টাকা। এভাবে মিশু নয়, প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে। দেশের প্রতিটি জেলায়। সাধারণ মানুষ সেসব প্রতারকের কথায় বিশ্বাস করে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এর পরই তারা বুঝতে পারেন, প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়েছেন। এর অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করতে চান না ঝামেলা বাড়বে আশঙ্কায়। কিন্তু পুলিশ বলছে, এ ধরনের ফাঁদে কেউ পড়ে গেলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জানাতে হবে। মিশু জানান, তিনি কদিন আগেই এমন ফাঁদে পড়েছেন। তিনি বলেন, সে গ্রামীণফোন কাস্টমার কেয়ার থেকে বলছে। আমি বললাম বলুন। তখন সে বলল, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে গ্রামীণ সিম ব্যবহারকারীদের মধ্যে একটা লটারি করা হয়েছে; যার মধ্যে আমি তৃতীয় হয়েছি। আমার অবাক লাগল। তারপর আমি জানার জন্য উৎসাহী হলাম। সে অনেক কথাই বলল আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য। তারপর সে বলল তার নম্বরে আমাকে তারা ১০০ টাকার বিনিময়ে ১৫ হাজার ৭০০ টাকার মিনিট দিচ্ছে যেটা আমি আগামী পাঁচ বছর ব্যবহার করতে পারব। আমি ভাবলাম ১০০ টাকাই তো, করে দেখি। সে ফোনের লাইন না কাটতে বলল। ফোনটা কানে ধরেই আমি দোকানে গিয়ে যেন রিচার্জ করি, আর সে যে নম্বরে কথা বলছে সে নম্বরেই পাঠাতে বলছে। আমি পাঠাই। আর তার কথামতো ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমি ১৫ হাজার ৭০০ টাকার মিনিট পাই। সে বলেছিল ফোন না কাটতে। ফোনেই মেসেজের নোটিফিকেশনে মেসেজ দেখতে বলে। আমি নোটিফিকেশনেই পুরো মেসেজ পড়লাম। দেখি আমি তার কথামতোই পেয়েছি। তখন সে বলল, আমি নাকি আরেকটা পুরস্কার পেয়েছি। সেটা জানতে হলে সে নাকি ভবনের দশম তলায় কল ট্রান্সফার করবে। তারপর সে ফোন কেটে দিল। একটু পর আবার কল এলো আরেকটি গ্রামীণ নম্বর থেকে। আমি রিসিভ করি। খুব সৌজন্যের সঙ্গে কথা বলে। সেও অনেক কথাই বলে আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য। সে বলে আমি নাকি ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা জিতেছি লটারিতে। আমি যখন বলি কীভাবে সম্ভব। তখন সে বলে যারা অনেকদিন ধরে তাদের সিম ব্যবহার করে তাদের লটারির মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হবে। তো এই পুরস্কার দেওয়ার সময় উপস্থিত থাকবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আর ড. ইউনূস। তারপর বলি এখন আমাকে কী করতে হবে? সে বলে, এই টাকাটা পেতে হলে আমাকে সরকারি ফি দিয়ে এই অর্থসম্পদ রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আমি বললাম কত টাকা লাগবে। সে বলে, ২৪ হাজার ৫০০। আমি বলি কত দিনে টাকাটা জমা করব, সে বলে তত্ক্ষণাৎই জমা করতে হবে। তা না হলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। সে বলে এখন ধার করে দেন, পরে আপনি উপহার থেকেই বাকি টাকা দিতে পারবেন। লাভ নাকি আমারই। তো আমি ফোন কানে রেখেই ভাবছি কী করব। তখন সে বলছে এখন জাস্ট হাফ দিলেই হবে। বাকি হাফ সে আমার ভাই হয়ে কোম্পানি থেকে ম্যানেজ করবে। আমি বললাম ঠিক আছে দেখি। সে বলল আমার জেতার কথা কেউ যেন জানতে না পারে, সে ক্ষেত্রে আমার ক্ষতি হবে। আমি আমার কলিগদের কাছ থেকে ১২ হাজার ৭৫০ টাকা জোগাড় করে তার দেওয়া বিকাশ নম্বরে পাঠাই। তারপর সে আমার ফোন নম্বরে ৯০ হাজার টাকার একটা মেসেজ পাঠায়। আমি তো খুব খুশি। তখন সে ফোন কানে রেখেই বিকাশ দোকানে যেতে বলে আর ১৫ হাজার করে টোটাল ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে। এজন্য সে দুটো রবি নম্বর দেয়। আমি বলি আমার কাছে অত টাকা নেই। সে বলে আমাকে দিতে হবে না। সে বিকাশের দোকানে গিয়ে বলতে বলে ইমারজেন্সি কাজে ঢাকা মেডিকেলে এ টাকাটা পাঠাব। আর তারপর বিকাশের দোকানে আমার ফোনের মেসেজ দেখিয়ে দিলে তারা ৩০ হাজার টাকা কেটে বাকিটা আমাকে দিয়ে দেবে। আমি বিকাশের দোকানে যাই। কিন্তু তারা কেউ করে না কাজটা। তারপর একটি দোকানের লোক বলেন, এগুলো ভুয়া। আমি তার পরও ভুয়া বলে বিশ্বাস করিনি। লোকটি আমাকে বুঝিয়ে বললেন। আমি বললাম, এত টাকা এ মুহূর্তে পাঠানো সম্ভব নয়। দোকানদার আমাকে অনেক বুঝান। ফোনটা ব্যাগে রেখেই দোকানদারের সঙ্গে কথা বলি। তারপর ফোন কানে নিয়ে আমি টাকা ফেরত চাইলে সে খুব রাগারাগি করে হুমকি দেয়। বলে কাল সকাল ৯টায় ফোন করে সে আমার টাকা ফেরত দেবে ৩ হাজার টাকা রিটার্ন ফি দিলে। তারপর সে ফোন কেটে দেয়। পরদিন আমি তাকে কল করি সে ফোন কেটে বন্ধ করে রাখে। আমি প্রথম কল আসা নম্বরে কল দিই। ফোন ধরেই একজন পুরুষ বলেন, গ্রামীণফোন কল সেন্টার গুলশান-২ নাভানা টাওয়ার থেকে লাকী বলছি।
লোকটি বলেন, আমি যাকে টাকা দিয়েছি, তাকে আরেক নম্বরে পাওয়া যাবে। আমি ওই নম্বরটা ১১টার পর খোলা পাই। তখন কল করলে বলে ৩ হাজার টাকা ওই নম্বরে রিটার্ন ফি দিলে আমার টাকা ৫ মিনিটেই পেয়ে যাব। এর পরই আমি নিশ্চতি হই আমি ফাঁদে পা দিয়েছি।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        