যখন সবাই যার যার মতো ব্যস্ত, ঠিক তখনই নিজের নৌকায় বসে ঘাটের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সদরঘাটের মাঝি শেখ মো. গোলাম কিবরিয়া সোহাগ। তার অপেক্ষা খেয়াপারের যাত্রীর জন্য। কিন্তু যাত্রী কখন আসবে তিনি জানেন না। অপেক্ষায় বসে আছেন দেড় ঘণ্টারও বেশি সময়। ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ১০টার বেশি। তখনো নৌকা ভাড়ার এক টাকাও তার পকেটে আসেনি। সোহাগের বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। ৩২ বছর ধরে এ ঘাটে মানুষ পারাপারে জড়িত তিনি। শুধু গোলাম কিবরিয়া সোহাগের দুঃসহ জীবনের গল্পই এমন নয়, সদরঘাটে মাঝিদের বেশির ভাগেরই জীবনচিত্র একই রকমের। আয় কমছে সবার। হাসি নেই মুখে। আছে হতাশার সুর। জীবন সংগ্রামে প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে। চলছে রাত-দিন টিকে থাকার লড়াই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নৌকা চলে জীবন চলে না তাদের। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে সদরঘাট-ওয়েজঘাট থেকে তেলঘাট, রহমত আলীর ঘাট ও কালীগঞ্জ চরঘাট পর্যন্ত প্রতিদিন ভোর থেকে বুড়িগঙ্গায় প্রায় ৭শ নৌকা ভাসান মাঝিরা। নানা সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি তারা। অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা লগি-বৈঠার ভালোবাসা টিকিয়ে রেখেছেন। গোলাম কিবরিয়া সোহাগ জানান, পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় অভাবের তাড়নায় নেমে পড়েন এ কাজে। এতে সহযোগিতা করেন কালাম নামের এক ব্যক্তি। তার হাত ধরে একটি ভাড়া নৌকা চালানো শুরু করেন। সেই সময়ে নৌকা ভাড়া লাগত একদিনে ১০ টাকা করে। এখন সেটি ৮০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। সদরঘাট কর্তৃপক্ষকে খাজনা দিতে হয় আরও ৮০ টাকা এবং রাতে নৌকা পাহারা বাবদ দিতে হয় ২০ টাকা। সব মিলে এখন দুর্বিষহ দিন যাচ্ছে সোহাগের। তার আক্ষেপ, ‘আগে ভালো ছিলাম, এখন ভালো নেই। নৌকা বাদ দিয়ে এখন বুড়িগঙ্গায় ট্রলার নামানোর ষড়যন্ত্র চলছে। নৌকা চালানোয় লাভ থেকে লোকসান বেশি। দৈনিক ১৮ ঘণ্টা নৌকা বাইয়ে ৫০০ টাকার বেশি আয় হয় না। দুঃখ-দুর্দশার এই দিনে অন্য কিছু করারও বয়স নেই। তাই এখানে বাধ্য হয়ে মাঝির কাজ করছি। আমরা এখন অবহেলিত দিন যাপন করছি।’ প্রায় ২৪ বছর ধরে সদরঘাটে মাঝি হিসেবে কর্মরত আছেন শফিকুল ইসলাম সেন্টুু। তিনি জানান, প্রথমে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসে এই কাজ ধরেন। সেই সময় সারা দিনে প্রায় ২শ টাকা আয় হতো। এখন ৫-৬শ টাকা আয়ে ঘাটের খরচ দেওয়া, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসার চালানো কষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। নৌকা ঘাটে শৃঙ্খলা নেই। মাঝিদের ওপর অত্যাচার করা হয়। নেতারা নৌকা বন্ধ করে ট্রলার চালু করতে চায়। ৩০ বছর ধরে মাঝি হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ সুলতান বলেন, ‘সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে নৌকা মাঝির নেতারা নৌকাকে তাড়িয়ে ট্রলার নামানের ধান্দায় আছে। তারা বলে, এখানে যারা ভোটার না, তারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নৌকা বাইবে। এসব নেতার মধ্যে আছে মনোয়ার মেম্বার, আসলাম, সিরাজ, মাঝি ফারুক ও মাঝি আশিক।’ এসব বিষয়ে ঢাকা নৌকা মাঝি বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হোসেন মিঠু এ প্রতিবেদককে জানান, ওই পাড়ে অর্থাৎ কেরানীগঞ্জ এলাকায় কয়েকটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা ঘাটে ঘাটে প্রতি নৌকা বাবদ ১০০ টাকা করে প্রতিদিন চাঁদা নিচ্ছে। ফলে নানা সমস্যার মধ্যে থাকতে হচ্ছে মাঝিদের। জানা গেছে, সদরঘাটে দুই ধরনের মাঝি আছে। কারও নিজস্ব নৌকা আছে। আবার কেউ মহাজনদের কাছ থেকে দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ে নৌকা চালান। প্রতি নৌকার জন্য দৈনিক ৫০-৮০ টাকা করে মহাজনদের দিতে হয়।
শিরোনাম
- চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
- উজানে বৃষ্টিপাত, সিলেটে বাড়ছে নদীর পানি
- চাঁদপুরে ভোক্তার অভিযানে দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
- প্যারিসে জমকালো আয়োজনে শুরু টেক্সটাইল সোর্সিং মেলা ২০২৫
- খুলনায় চুরি হওয়া নবজাতক ৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার
- কুমিল্লায় চুন কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ, ৮ শ্রমিক কারাগারে
- পরিবেশ রক্ষায় প্লাস্টিক বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে: চসিক মেয়র
- নারায়ণগঞ্জে ৬ কারখানার বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন
- ইসরায়েল আর কোনো হামলা চালাবে না কাতারে : ট্রাম্প
- এনবিআরে ১৮২ জনের দপ্তর বদল, বাধ্যতামূলক অবসর ও বরখাস্ত ২
- কাতার ও ফিলিস্তিনের প্রতি অবিচল সমর্থন জানাল বাংলাদেশ
- ফের ভেনেজুয়েলার কথিত ‘মাদকবাহী’ নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩
- খুলনায় ১০৩ কেজি হরিণের মাংসসহ একজন আটক
- তিন ট্রিলিয়ন ডলারের ক্লাবে অ্যালফাবেট
- একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১৬ সেপ্টেম্বর)
- লড়াই করলো হংকং, কষ্টার্জিত জয় পেল শ্রীলঙ্কা
- ডাকসুর ভোট ম্যানুয়ালি গণনার জন্য লিখিত আবেদন উমামার
- বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর অভিযানে ১১ পাচারকারী আটক
- ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত
- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে প্রজ্ঞাপন
নৌকা চলে জীবন চলে না
মাহবুব মমতাজী
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর