বৃহস্পতিবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভাসানচরে স্থানান্তরে অনিশ্চয়তা

রোহিঙ্গা নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব জাতিসংঘের

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

ভাসানচরে স্থানান্তরে অনিশ্চয়তা

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভিতর থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর বিষয়টি এখনো অনিশ্চয়তার ফেরে ঝুলছে।

বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রায় বছর খানেক আগে ভাসানচরকে মানুষের বসবাসের জন্য মোটামুটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে মনুষ্য বসবাসের ক্ষেত্রে তা কতটুকু স্থায়িত্ব ও নিরাপদ- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল। গত বর্ষা মৌসুমের আগেই কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির থেকে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের কথা থাকলেও কার্যত তার কিছুই হয়নি। চরটিতে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এখনো কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থী কমিশনার আবুল কালাম। বিশেষ করে ভাসানচরের প্রস্তুতি আন্তর্জাতিক মাপকাঠি অনুযায়ী হয়েছে কিনা- তা খতিয়ে দেখে আন্তর্জাতিক মহল সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেই রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করা যাবে বলে জানা গেছে। নানা সংশয়ের কথা জেনে রোহিঙ্গারাও ভাসানচরে যেতে রাজি হচ্ছে না। ফলে এবারও বর্ষা মৌসুমের আগে তাদের স্থানান্তর কাজ শুরু হবে কিনা- তা নিশ্চিত নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভাসানচরে বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি নির্মাণ, সাইক্লোন শেল্টারসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সৌর বিদ্যুত প্রকল্পের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের আগে কারিগরি মূল্যায়ন শেষে তাদের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। নোয়াখালীর মূল ভূখ- থেকে তিনঘণ্টার নৌপথ ব্যবহার করে যে ভাসানচরে যেতে হয়- তাতেও রোহিঙ্গাদের আপত্তি ও সংশয় রয়েছে। তারা মিয়ানমারে কখনো নৌপথ ব্যবহার করেনি, অধিকাংশই পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দা। এখানে নদী ও সাগর পথ পাড়ি দিতে হবে- এমন ভয় থেকেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে আগ্রহী নয়। বর্ষায় জোয়ারের পানিতে চরটি ডুবে যাবে কিনা, কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে সুবিধা হবে নাকি অসুবিধা হবে? এসব নিয়ে ভাবনায় রয়েছে রোহিঙ্গারা। এদিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের ক্যাম্প মাঝিদের একজন মো. মুহিবুল্লাহ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্যাম্পের মাঝিদের সঙ্গে কয়েকদফা আলাপ হয়েছে আমাদের কিছু লোককে ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে। তাদের একটি তালিকা করারও কথা হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে আর কাজ এগোয়নি। এখন কবে কী হবে তা আমাদের জানা নেই। তিনি আরো বলেন, ভাসানচর নিয়ে নানা কথা-কাহিনী শুনে আসছি। বাস্তবে তা মানুষের বসবাস উপযোগী কিনা তা জানি না। সবাই যদি ভালো বলে, আবহাওয়াটা ভালো, লোকজন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারবে- তাহলে কোনো সমস্যা নেই। এদিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর বিষয়ে জাতিসংঘের মতামত হচ্ছে- স্থানান্তরের পূর্বে এর সম্ভাব্যতা ও নিরাপত্তা যাচাই করতে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার দ্বারা স্বাধীন কারিগরি এবং সুরক্ষা মূল্যায়ন করা উচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সেখানকার বাসযোগ্যতা এবং এক লাখ শরণার্থী পরিবহন এবং তাদের সেখানে বসবাসের ফলে কী প্রভাব পড়বে, রোহিঙ্গারা সেখানে যাবে কিনা মতামত নেওয়ার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে বলে মত দিয়েছেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিএ সেপ্পো। উল্লেখ্য, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরটির দৈর্ঘ্য ১৪ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১২ কিলোমিটার। সেখানে নয় মাস ধরে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করে বিশাল এ চরকে ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি টিনশেড পাকাঘর। প্রতিটি শেডে রয়েছে ১৮টি কক্ষ। প্রতি চার সদস্যবিশিষ্ট পরিবারকে দেওয়া হবে একটি কক্ষ। মাটি থেকে চার ফুট উঁচুতে হচ্ছে বাসস্থান। এ ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে খেলার মাঠ, পুকুর, মসজিদ, হাসপাতাল, সড়ক, লাইট হাউস, গার্ডেন, সাইক্লোন শেল্টার ও সোলার সিস্টেম। চরকে ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে নিরাপদ রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং চারতলা বিশিষ্ট ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার। 

সর্বশেষ খবর