বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

নুসরাতের সহপাঠী আটক

বিচার দীর্ঘসূত্রতার কারণেই নুসরাত হত্যা মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন

প্রতিদিন ডেস্ক

নুসরাতের সহপাঠী আটক

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় জান্নাতুল আফরোজ মণি নামে এক আলিম পরীক্ষার্থীকে কেন্দ্র থেকে আটক করেছে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার কেন্দ্রসচিব নুরুল আফসার ফারুরী মণিকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেছন। তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক শাহ আলম জানান, ‘আমাদের অনেক টিম মাঠে কাজ করছে, কেউ তাকে আটক করেছে  কিনা তা জানা নেই।’ ফেনী প্রতিনিধি জানান, আটক মোহাম্মদ শামীমকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে পিবিআই। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি।

খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দফতরের পাঁচ সদস্যের কমিটি : নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা খতিয়ে দেখতে একজন উপমহাপরিদর্শকের (ডিআইজি) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারীর নির্দেশে গঠিত এ কমিটি দ্রুততর সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। ডিআইজি নেতৃত্বাধীন এ কমিটিতে একজন পুলিশ সুপার, দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও একজন পরিদর্শক রয়েছেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা আজ ফেনী যাচ্ছেন। জানা গেছে, নুসরাত হত্যা তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়ার তিন দিন পরই পিবিআইর প্রধান বনজ কুমার মজুমদার আইজিপি বরাবর প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে সোনাগাজীর ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল বলে সূত্র নিশ্চিত করেছেন। বর্তমান কমিটিও ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনসহ প্রশাসনের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখবে। এ প্রতিবেদন সরকারের উচ্চ পর্যায়েও দেওয়া হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান ডিআইজি রুহুল আমীন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমরা বুধবার (আজ) ফেনী যাচ্ছি। সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে পারব বলে আশা করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এর আগে ১১ এপ্রিল বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ জানিয়েছে, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। মামলা তদন্ত ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের গাফিলতি দৃশ্যমান হলে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করা হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে এ মামলায় মণিসহ ১৫ আসামি গ্রেফতার হয়েছে। এর মধ্যে নয়জন রিমান্ডে রয়েছেন। দুজন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তবে রিমান্ডের আসামিরা কোনো তথ্য দিয়েছেন কিনা এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. মোনায়েম। রাফি হত্যা নিয়ে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিত হয়েছে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

ফেনী : ফেনীর ট্রাংক রোডের শহীদ মিনার চত্বরে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সামাজিক, ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। সকালে ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি মোশারফ হোসেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বিচার দাবিতে মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম আখাউড়া ও মানবাধিকার কমিশন আখাউড়া শাখার যৌথ উদ্যোগে গতকাল বিকালে পৌর শহরের সড়ক বাজারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সাংবাদিক মো. রাকিবুল ইসলাম, শেখ মনির হোসেন নিজাম, মানবাধিকার সংগঠনের সভাপতি এন এস কবির পলাশ, বাহার খাদেম, আওয়াল আহমেদ, ফরিদ আহমেদ, আবেদ আলী প্রমুখ। এ ছাড়া বিকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখা মানববন্ধন করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সামনে পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী মাসুদ আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দীপক চৌধুরী বাপ্পী, সংগঠনের সহসভাপতি শামসুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সদস্য নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী নাসির মিয়া, জেলা নারীমুক্তি সংসদের সহসভাপতি রোকেয়া রহমান প্রমুখ। নাটোর : বিচার দাবিতে নাটোরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ। বিকালে নাটোর প্রেস ক্লাব চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য রত্না আহমেদ। বক্তব্য দেন নাটোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিউটি আহমেদ ও নাটোর পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের নেতারা।

বিচারহীনতার কারণেই নুসরাত হত্যা : বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বলে মনে করছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। তিনি বলেন, ‘সরকারের আইন থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতি বেশ কিছু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নুসরাতের ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। বিচার প্রক্রিয়া সহজতর করতে যে কাজগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে করা দরকার সেগুলো করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।’ গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সময়মতো সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণে নুসরাতের মতো এমন ঘটনা ঘটছে। শুধু আইন করলে হবে না, আইনের প্রয়োগ করতে হবে। নুসরাতের ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে নুসরাত হত্যাকা- এড়ানো যেত।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অপরাধ ও অবহেলার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ সাত দফা সুপারিশ করা হয়েছে। নুসরাত হত্যা মামলাটি পিবিআই গুরুত্ব সহকারে দেখছে। নুসরাতের বিষয়টি স্পষ্ট। আশা করছি পিবিআই দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। দল-মত নির্বিশেষে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে অপরাধীরা ভয় পাবে। নুসরাত হত্যা মামলার রায় এক মাসের মধ্যে দেখতে চায় কমিশন।’ কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘নুসরাত সাহসী মেয়ে, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তাকে যেভাবে কেরোসিন ঢেলে হত্যা করা হয়েছে, তা মানবতার ইতিহাসের জঘন্য অপরাধ। এ অপরাধে যারা জড়িত তারা ক্ষমার অযোগ্য। তাদের যদি আইনের মাধ্যমে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারি, তাহলে সমাজে এ-জাতীয় হত্যা বন্ধ হবে না। নইলে আমরা বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে পড়ে যাব।’

সাত দফা সুপারিশ : নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে সাত দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

সর্বশেষ খবর