মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভোট আজ

লড়ছেন দুই দলের সভাপতিসহ হেভিওয়েটরা
প্রণবপুত্র অভিজিৎ কি হ্যাটট্রিক করতে পারবেন?

কলকাতা প্রতিনিধি

সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভোট আজ

ভারতে লোকসভা নির্বাচনে আজ তৃতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। এ পর্বে দেশের ১৫ রাজ্যের ১১৭ আসনে ভোট হবে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃতীয় পর্বে ১১৫টি আসনের মধ্যে ৬২টিতে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি জয় পেয়েছিল। অন্য বড় দলগুলোর মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছিল ১৬, সিপিআই ৭, বিজেডি ৬, সমাজবাদী পার্টি (সপা) ৩টি। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রে সরকার গঠনে এ পর্বের জয়-পরাজয় যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আজকের নির্বাচনে দুটি বড় দল বিজেপি ও কংগ্রেসের সভাপতিরা লড়াই করছেন। এবারই প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। গুজরাটের গান্ধীনগর আসনে প্রার্থী হয়েছেন অমিত, কেরালার ওয়ানাড়ের আসনে প্রার্থী হয়েছেন রাহুল। তিনি অবশ্য উত্তরপ্রদেশের আমেথি আসনেও প্রার্থী হয়েছেন। এ দফার নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিন সোমবার ভোটারদের মন কাড়তে গান্ধীনগরে বিশাল রোড শো করেন অমিত শাহ। অন্যদিকে ওয়ানাড়ে ভাই রাহুলের হয়ে কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শুধু প্রচারণায়ই করেননি, পাশাপাশি বারানসি কেন্দ্রে মোদির বিপক্ষে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। তৃতীয় দফায় গুজরাটের ২৬, কেরালার ২০, কর্ণাটকের ১৪, মহারাষ্ট্রের ১৪, উত্তরপ্রদেশের ১০, ছত্তিশগড়ের ৭, উড়িষ্যার ৬, বিহারের ৫, পশ্চিমবঙ্গের ৫, আসামের ৪, গোয়ার ২, দাদরা ও নগর হাভেলির ১, দমন ও দিউর ১, জম্মু-কাশ্মীরের ১, ত্রিপুরার ১টি আসনে ভোট নেওয়া হবে। প্রণবপুত্র অভিজিৎ কি হ্যাটট্রিক করতে পারবেন : লোকসভা নির্বাচনে জয়ের হ্যাটট্রিকের মুখে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায় লোকসভার ‘জঙ্গিপুর’ আসনে কংগ্রেস এবারও তাকেই প্রার্থী মনোনীত করেছে। ১৯৬৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই আসনটি সিপিআইএম-এর দখলে ছিল। ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিনিয়র কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জি এই আসনে জয়লাভ করেন। সেই থেকে গত ১৫ বছর ধরে এই আসনটি কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। ২০০৯ সালেও প্রণব মুখার্জিই জয়ী হন। প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য ২০১২ সালে প্রণব মুখার্জি ওই আসন থেকে পদত্যাগ করায় উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে। এরপর কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়ে প্রথমবারের মতো লোকসভার সদস্য হন অভিজিৎ। মাত্র ২৫৩৬ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন অভিজিৎ। অভিজিৎ পান ৩,৩২,৯১৯ ভোট, মোজাফ্ফর হোসেন পান ৩,৩০,৩৯৩ ভোট। সেবার অবশ্য ওই আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিআইএম প্রার্থী মুজাফ্ফর হোসেনকে ৮১৬১ ভোটে হারালেও তা লোকসভার জয়ের ব্যবধানের নিরিখে খুবই কম। সেবার তৃতীয় স্থান পায় তৃণমূলের এস কে নুরুল। শুধু জঙ্গিপুর নয়, গোটা মুর্শিদাবাদ জেলাকেই বলা হয়, কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। এই জেলায় কোনো  লোকসভা নির্বাচনেই একটি আসনেও জয় পায়নি তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই চলমান সপ্তদশ নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলায় অল-আউট ঝাঁপাতে চাইছে শাসকদল তৃণমূল। মুর্শিদাবাদ জেলায় মোট তিনটি লোকসভা আসন।  জঙ্গিপুরে অভিজিতের বিরুদ্ধে খলিলুর রহমানকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। ইতিমধ্যে খলিলুরের হয়ে প্রচারণাও সেরে গেছেন দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি। মুসলিম অধ্যুষিত জঙ্গিপুরে সংখ্যালঘু ভোটারদের মন টানতে মমতা নির্বাচনী প্রচারণায় অভিযোগ করেন অভিজিতকে জেতাতে পেছন থেকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) সহায়তা করছে। অভিজিতের বাবা প্রণব মুখার্জি গত বছরেই নাগপুরে আরএসএস-এর সদর কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী খলিলুর রহমানের অভিযোগ এলাকার উন্নয়নে অভিজিৎ কোনো কাজই করেননি।

সব দেখেশুনে অভিজিৎ নিজেও স্বীকার করে বলছেন ‘নিঃসন্দেহে এবার লড়াইটা বেশ শক্ত। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি আমাকে নিশানা করেছেন এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ করে চলেছেন। এর অর্থ কী? তিনি প্রশাসনকে পরিষ্কার বার্তা দিয়ে রেখেছেন। আমি নিশ্চিত যে সত্যের জয় হবে।’

আরএসএস-এর সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিজিৎ বলেছেন ‘তার (মমতা) মনে রাখা উচিত যে তিনিই অটল বিহারি বাজপেয়ি সরকারের মন্ত্রী ছিলেন।

তাই প্রথমে তাকেই পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত যে আরএসএস-এর সঙ্গে তার সম্পর্কটা কী?’

তবে মমতার আরএসএস-তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন জঙ্গিপুর আসনে বিজেপির প্রার্থী মাহফুজা খাতুন এবং সিপিআইএম প্রার্থী জুলফিকার আলী। উভয়েরই অভিমত জঙ্গিপুরে মোট ভোটারের অর্ধেক মুসলমান-আর এই মুসলিম ভোট টানতেই মমতার এই মন্তব্য। পাশাপাশি এও জানিয়েছেন বিড়ি শ্রমিকদের দুর্দশা বা গঙ্গা ক্ষয়রোধে কংগ্রেস এমপি অভিজিৎ কিছু করতে পারেননি।

সিপিআইএম’এর জুলফিকার আলী বলেন, ‘কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শগত পার্থক্য আছে। যদিও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।’

বিজেপি প্রার্থী মাহফুজা খাতুনের দাবি, ‘এই কেন্দ্রজুড়েই পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। জঙ্গিপুরের ভোটাররা ঠিকই করে নিয়েছেন যে তারা বিজেপিকেই ভোট দেবেন কারণ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই তারা তৃণমূলের গু াগিরি, সিপিআইএম’এর নিষ্ক্রিয় রাজনীতি এবং কংগ্রেসের অদক্ষতার নমুনা দেখেছে।’

তৃতীয় দফায় আগামী ২৩ এপ্রিল এই কেন্দ্রে নির্বাচন। গণনা ২৩ মে।

সর্বশেষ খবর