শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাণিজ্যে ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাণিজ্যে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া। দেশ দুটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে চলছে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। সম্প্রতি এ ধরনের এক বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার কাছে ৩০০টি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, গত ২২ থেকে ২৩ জুলাই জাকার্তায় এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরীফা খানম।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের প্রায় ৭ হাজার ২০০টি ট্যারিফ লাইন রয়েছে, যার মধ্যে ৩০০টি ট্যারিফ লাইনে শুল্ক মওকুফের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে ৮ ডিজিট লেবেলের মূলত ২৭০টি ট্যারিফ লাইনের পণ্য রপ্তানি হয়। সে কারণে ৩০০ ট্যারিফ লাইনে শুল্ক সুবিধা পেলে আমাদের মোটামুটি সব রপ্তানি পণ্যই কাভার করবে। শরীফা খানম বলেন, তারাও সমপরিমাণ পণ্যে ট্যারিফ সুবিধা চেয়েছে। এখন দুই পক্ষই এই ট্যারিফ লাইন পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট পণ্য তালিকা দিয়ে একটি অফার লিস্ট দেবে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পণ্য তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পিটিএ চুক্তিতে শুল্ক সুবিধার ক্ষেত্রে ‘রুলস অব অরিজিন’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তারা রপ্তানি পণ্যের শুল্ক সুবিধার জন্য ৪০ শতাংশ ভ্যালু এডিশন বা স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ যেহেতু এখনো এলডিসি কাতারে রয়েছে, সে কারণে রুলস অব অরিজিনের শর্তে বাংলাদেশের জন্য ৩০ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ার জন্য ৪০ শতাংশ ভ্যালু এডের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে ভারত মহাসাগরীয় রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) সম্মেলনের ফাঁকে জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এক বৈঠক হয়। সে সময় পিটিএর বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। গত বছর ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ঢাকা সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়। পরে দুই দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে যৌথ বিবৃতিও দেওয়া হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ২৬ কোটি জনসংখ্যার বড় দেশ হলেও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক তলানিতেই থেকে গেছে। এর বড় একটি কারণ দেশটিতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক হার। এলডিসি সত্ত্বেও দেশটিতে শুল্ক সুবিধা পায় না বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশ পাম অয়েল, কয়লা, প্লাস্টিকের কাঁচামাল ও রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি, চশমা, কাঠসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে। বাজারে বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ, পাট ও পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, তৈরি পোশাকসহ অনেক পণ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পিটিএ চুক্তি হলে এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। এ ছাড়া আসিয়ানের নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার বিনিয়োগও বাংলাদেশের জন্য বড় সহায়ক হতে পারে। অগ্রাধিকারমূলক এই বাণিজ্য চুক্তিটি ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির পথ খুলে দিতে পারে।

সর্বশেষ খবর