সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

সৌদি আরবে মরুর বুকে লাল-সবুজের বাংলাদেশ

মোস্তফা কাজল, সৌদি আরব থেকে ফিরে

সৌদি আরবে মরুর বুকে লাল-সবুজের বাংলাদেশ

সৌদি আরবের মরুভূমিতে লাল-সবুজের বাংলাদেশ হাতছানি দিচ্ছে। সেখানে কিছু বাংলাদেশি কৃষক এই দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন।

কৃষিপ্রধান অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ ছেড়ে সৌদি আরবে এসেও শত প্রতিকূলতার মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে চলেছেন বাংলার এই সূর্যসন্তান প্রবাসীরা। কয়েক দিন আগে আল কাশিম এলাকায় কৃষি খামার পরিদর্শন করতে গিয়ে মনে হয়েছিল যেন একখ  বাংলার গ্রামেই পা রেখেছি। ধু-ধু মরুভূমির এই বিশাল বুকজুড়ে লাল-সবুজের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের হাতছানি। দেখেই মন জুড়িয়ে যায়। দেখা গেছে, প্রায় জনশূন্য এই বিশাল  ধু-ধু মরুর বুকে কৃষকরা মনের আনন্দে চাষাবাদ করছেন মাসকলাই, আলু, ফুলকপি-বাঁধাকপি, পালংশাক, লালশাকসহ বিভিন্ন সবজি ও আবাদি ফসল। সব মিলে মনে হয়েছে যেন ধু-ধু বালুচরে একখ  লাল-সবুজের বাংলাদেশ। প্রচ  গরমের ওই দেশে শীতকালীন সবজি চাষ কীভাবে সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষিকর্মে নিয়োজিত কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার লাল মিয়া বলেন, সবজি উৎপাদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে এবং পরিশ্রমী উৎপাদক হতে পারলে এটি কোনোভাবেই অসম্ভব নয়। সৌদি প্রবাসী লাল মিয়া দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে আল কাশিম এলাকায় কৃষিকাজ করে নিজেকে অনেকটাই স্বাবলম্বী করতে পেরেছেন। সৌদি আরবের আল কাশিম এলাকায় মরুর বুকের কৃষি অঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশি প্রচ- গরম উপেক্ষা করে কাজ করছেন। এলাকায় কৃষিকর্মে নিয়োজিত কৃষিজীবী প্রবাসীরা বলেন, ‘আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে যাচ্ছে। তাতে করে যেমন আমাদের পরিবারগুলো সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করছে, ঠিক তেমনই এ থেকে রেমিট্যান্স ক্রমাগত বাড়ছে। দেশ-জাতি সার্বিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কিন্তু আমরা কী পাচ্ছি?’ আল কাশিম এলাকার আরেক কৃষিজীবী প্রবাসী কাদের খান বলেন, ‘বাংলাদেশিদের সমস্যার যেন অন্ত নেই।’ অনেকে বলেছেন, ‘মরু অঞ্চলে কারও কষ্টের শেষ নেই। আবার কারোর জন্য এটি বিরামহীন আনন্দ, ভোগ-বিলাস আর শান্তিভোগের স্থল। এ শহরের বেশিরভাগ এলাকা গ্রামাঞ্চল নামে পরিচিত। এই গ্রামাঞ্চলগুলোতে সৌদির নাগরিকরা শহরের পরিবেশে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকটা শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে প্রতি সপ্তাহে ছুটে আসেন শান্তিভোগের মরু অঞ্চলের নীড়ে।’ এ ছাড়া এ অঞ্চলে বসবাসরত কৃষিজীবী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের সুখ-দুঃখের অনেক কথা ও কিছু দাবিদাওয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের ক্ষেত্রে চরম অবহেলার কথা উল্লেখ করেছেন। আল কাশিম এলাকার কৃষিজীবী প্রবাসীরা তাদের সৌদির জীবনযাপন সম্পর্কে বলেন, ‘এই মরুর বুকে প্রচ  কষ্ট হলেও কাজ করে আমরা মোটামুটি লাভবান হচ্ছি- এ কথা আমরা স্বীকার করছি। তবে অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, বর্তমানে রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ  সেরে নিতে একে তো অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তারপর দূতাবাসে যেতে আসতে দুই দিন আমাদের খরচ হচ্ছে বেশি। আমাদের অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’ শেখ হামেদ ফাওজান নামের সেই সবজি খামারের সৌদি মালিক বলেন, ‘বাংলাদেশি দ্বারা পরিচালিত আমার কৃষি খামারটি খুবই লাভজনক। আমি বাংলাদেশিদের খুবই ভালোবাসি।’ ফাওদা আল খায়ের নামের এক কৃষি খামারের (মাসুল) সুপারভাইজার শাহ আলম বলেন, ‘বাংলাদেশিরা কর্মনিষ্ঠ এবং পরিশ্রমী। সৌদি আরবের মরুর বুকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সীমাহীন পরিশ্রমে উৎপাদিত নানা প্রকারের সবজিতে ভরপুর দেশটির বাজার। এ ছাড়া সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরের সবজির বাজারে গেলে মনে হয়, এসব সবজি যেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাতের ছোঁয়া পেয়ে এসেছে।

 এসব সবজিতে দেশীয় স্বাদ পাওয়া যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর