শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে বরেন্দ্র গ্রাম

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

বদলে যাচ্ছে বরেন্দ্র গ্রাম

জুলিতা কিসকু এক সময় শুধুই গৃহিণী ছিলেন। স্বামী বিশ্বনাথ সরেন মাঠে কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়েই সংসার চালাতেন। কিন্তু তারপরেও সংসারে অশান্তি লেগে থাকত। স্বামীর কাছে তার কথার কোনো মূল্যই ছিল না। মাত্র ছয় বছর আগের সেদিনের কথা এখন প্রায় ভুলতে বসেছেন জুলিতা। স্বামীর পাশাপাশি এখন গ্রামের মানুষও তার কথার মূল্য দেন। গ্রামের নানা সমস্যা ও কাজে তিনি সিদ্ধান্ত দেন। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নে এই নারী সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফলে বদলে গেছে তার সামাজিক অবস্থান।

শুধু জুলিতা কিসকু নন- সংসারে ও গ্রামে খৈমন খাখা, কল্পনা তিরকি, রুপালি লাকড়ার মতো অনেক আদিবাসী নারীর সামাজিক অবস্থান বদলে গেছে। নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নে এগিয়ে চলেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের নারীরা।

গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর মোড় থেকে ডানদিকে ৩ কিলোমিটার গেলে গোগ্রাম। সেখান থেকে পাকা রাস্তা হয়ে আরও দুই কিলোমিটার ভিতরে, এরপর কাঁচা রাস্তা দিয়ে পায়ে হাঁটা পথ। চারপাশে ফসলের মাঠ, নিঃস্তব্ধতা। বরেন্দ্রভূমির উঁচুনিচু জমি। এর মাঝেই ছোট্ট একটি গ্রাম মধুমাঠ। এখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাঁদের মধ্যে অনেকে মাঠে কৃষি কাজ করেন।

চল্লিশোর্ধ্ব খৈমন খাখা জানান, চারপাশ দিয়ে যে ফসলের জমি তাদের ঘিরে আছে, তার এক ছটাকও তাদের কারও নয়। সকাল থেকে বিকাল অবধি মানুষের জমিতে কাজ করে যে মজুরি পান তা দিয়েই সংসার চালান তারা। মজুরি পেতেও তাদের বৈষম্যের শিকার হতে হতো। এ কারণে তারা ছেলে-মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারতেন না। কিন্তু এখন তারা মজুরি বৈষম্যের প্রতিবাদ করছেন। জুলিতা ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তারা নারীর পাওনা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এখন দুস্থ ভাতা, বিধবাভাতা সম্পর্কে জানতে পারছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তারা তাদের অধিকার আদায় করতে পারছেন। গত নির্বাচনে জুলিতা নির্বাচিত হতে পারেননি। তবে জুলিতা আগেই তাদের অধিকার সম্পর্কে জানিয়েছেন। ফলে এখন যিনি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি আর ঠকাতে পারেন না। গোগ্রামের কল্পনা তিরকি জানান, পরিবারে ও সমাজে নারীদের কোনো অধিকার আছে বলে তাদের জানা ছিল না। এখন তারা এসব জেনেছেন। নারীরা যাতে তাদের অধিকার আদায় করতে পারে সেজন্য গঠন করেছেন সম্মিলিত আদিবাসী নারী জোট। এ জোটের সভাপতি তিনি। এখন নারীরা শ্রম বৈষম্যের শিকার হলে প্রতিবাদ করছে। বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন বন্ধ করছে। গ্রামের সালিশ বৈঠকে নারীদের ডাকা হচ্ছে। জুলিতা কিসকু তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। রুপালি লাকড়া জানান, গোগ্রাম ও মধুমাঠসহ আশপাশের গ্রামের নারীরা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতেন না। স্কুলে পাঠানোর চেয়ে মাঠে কাজ করলে আয় বাড়বে এমন ধারণা ছিল তাদের। কিন্তু সেই দিন বদলেছে। এখন শিশুরা স্কুলে যায় না, এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। তিনি তার চার মেয়েকে নিয়মিত স্কুলে পাঠান। অন্য নারীদেরও উৎসাহিত করেন। সংগঠক রাজকুমার শাও জানান, আগের চেয়ে নারীরা ক্ষমতায়নে অনেক এগিয়েছে। আগে সালিশ বৈঠকে বসার সুযোগ পেতেন না। এখন প্রত্যেকটি গ্রামে নারীদের ডাকা হচ্ছে। সরকারি নানা কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ থাকছে।

সর্বশেষ খবর