শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

পুণ্ড্রনগরই এখন বগুড়ার মহাস্থানগড়

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

পুণ্ড্রনগরই এখন বগুড়ার মহাস্থানগড়

সে কথা অনেক আগের। যখন মানুষের জীবন-জীবিকা সবই ছিল স্থানীয় উদ্ভাবন পদ্ধতিতে। সে সময়ে বগুড়ায় গড়ে উঠেছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী পু-্রবর্ধন। যা পু-্রনগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়। কালের বিবর্তনে পু ্রনগরই এখন ঐতিহাসিক বগুড়ার মহাস্থানগড়। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে গড়ে উঠেছিল সে সময়ের সভ্য জনপদ। কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে বসা সেই দর্শনীয় স্থানটি এখনো সেই দিনের চি?হ্ন বুকে ধারণ করে আছে। প্রতি বছর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটক এলেও পর্যটকদের জন্য তেমন কোনো সুবিধা রাখা হয়নি। কিছু উন্নয়ন কাজ হলেও এখনো দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেনি সভ্যতার স্বাক্ষর মহাস্থানগড়। জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ১৫ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে মহাস্থানগড় এক সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে বিস্তার লাভ করে। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এখানে অনেক রাজা রাজত্ব করেন। বলা হয় মহাস্থানগড় ছিল সে সময়কার রাজধানী। এর ভিতর রয়েছে মৌর্য, গুপ্ত, সেন, পাল ও সামন্ত রাজবংশ। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পু ্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা করেন। দশম শতকের মধ্যবর্তী সময়ে এখানে রাজত্ব করেন রাজা নরসিংহ বা পরশুরাম। কিংবদন্তি অনুযায়ী রাজা পরশুরাম ছিলেন অত্যাচারী। তাকে উচ্ছেদ করে ইসলাম ধর্মের শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আসেন হজরত শাহ্ সুলতান বলখী (রহ.) মাহী সওয়ার। কালক্রমে বাংলার প্রথম রাজধানী ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসাবশেষ নিয়ে আজও কালের সাক্ষী হয়ে আছে মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড় দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন। কিন্তু আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পর্যটক কমে যাচ্ছে। নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেটি দৃষ্টি নন্দন হয়ে ওঠেনি। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা না থাকায় পর্যটক হারাতে বসেছে বৌদ্ধ সভ্যতার অনন্য নিদর্শন ভাসু বিহার, মহাস্থানগড়, গোকুল মেড় বা বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের বাসরঘর। মহাস্থানগড়ে দর্শনার্থী বাড়াতে সরকারিভাবে উন্নয়নমূলক কিছু কাজ করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। বগুড়ার এ মহাস্থানগড়কে ঘিরে এ অঞ্চলে পর্যায়ক্রমে সভ্যতা, সাংস্কৃতিক বিকাশ হতে থাকে। বগুড়ার মহাস্থানগড় জাদুঘরের কাস্টডিয়ানের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল মহাস্থানগড়ের উন্নয়নে এডিবির একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তির মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ সংস্কারে প্রাচীন ইটের মতো করে নতুনভাবে ইট তৈরি করে তা মূল স্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রবেশদ্বার, কালিদহ সাগরের (স্থানীয় খাল) ওপর ছোট্ট ঝুলন্ত সেতু, খাবারের দোকান, শৌচাগার, কাঠের ব্রিজ, সীমানা নির্ধারণে তার কাটাসহ অবকাঠামো শ্রীবৃদ্ধির জন্য প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। সেসব কাজ হলেও বিশাল এলাকার মহাস্থানগড়ের এখনো অনেক কিছুই রয়েছে অরক্ষিত। এখনো অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে, চাষবাস হচ্ছে মহাস্থানগড়ের ভিতর, কোনো কোনো অংশের (বিমের জাঙ্গাল) মাটি খনন করে বিক্রি করছে একটি চক্র। বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মজিবুর রহমান জানান, দুই বছর আগে মহাস্থানগড় এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। পর্যটক আসবে ডিসেম্বর, জানুয়ারি থেকে। ওই সময়টাতে বেশি হয়ে থাকে পর্যটক। জাদুঘরের প্রাচীরেও কিছু কাজ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর