শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সম্মেলনের উৎসবে ভাসছে ক্ষমতাসীনরা

রফিকুল ইসলাম রনি

সম্মেলনের উৎসবে ভাসছে ক্ষমতাসীনরা

আওয়ামী লীগের আসন্ন কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ঘিরে দেশব্যাপী নেতা-কর্মীরা উৎসবের আমেজে রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে সাবেক ছাত্রনেতা, জেলার প্রবীণ নেতা এমনকি দলীয় এমপিরাও এখন নিয়মিত দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়মুখী হচ্ছেন। গণভবনেও যাওয়া-আসা বাড়িয়েছেন পদপ্রত্যাশীরা। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনে নেতৃত্বের যে পরিবর্তন হয়েছে সেই ধারাবাহিকতা থাকবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলেও। তাই, লক্ষ্য অর্জনে সক্রিয় পদ-পদবি প্রত্যাশীরা। সূত্রমতে, আর ১৩ দিন পর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি এখন   শেষ পর্যায়ে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে জেলা-মহানগর ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করতে ছুটে বেড়াচ্ছেন দলের সিনিয়র নেতারা। জেলা সম্মেলনেও শহরগুলোকে আলোকসজ্জিত করা হচ্ছে। সম্মেলন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১টি উপকমিটি রাতদিন কাজ করে চলেছে সমানতালে। এবারের সম্মেলনে ৬ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। থাকছে না বিদেশি অতিথি। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

সূত্রমতে, আসন্ন সম্মেলন উপলক্ষে প্রতিদিনই দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়ছে। সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসায় আশাবাদী হয়ে উঠছেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সাবেক নেতারা। বিকালে ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার কিছু আগ থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জমজমাট থাকে ধানমন্ডি ৩-এ দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়। সাবেক ছাত্রনেতারা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন করেন। পদ প্রত্যাশীদের অনেকে গণভবনে গিয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছেন। শুধু পদ-পদবি প্রত্যাশীরাই নন, গণভবন ও দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে নিয়মিত হাজির হচ্ছেন যারা বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন তারাও। পদ-পদবি টিকিয়ে রাখা এবং পদোন্নতি পাওয়ার আশা করছেন তারা। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডি কার্যালয়ে কথা হয় রংপুরের ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী সিদ্দিক রনির সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখেই আমরা এখানে এসেছি। সম্মেলন তো আওয়ামী লীগের কাছে ঈদ উৎসবের মতোই।’ শরীয়তপুরের সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের হুমায়ুন কবির মোল্যা বললেন, ‘আমরা যারা তৃণমূলে সংগঠন করি, তাদের জন্য কেন্দ্রীয় সম্মেলন মানেই উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা দলীয় সভানেত্রীর অফিসে আসেন। আমরাও এসেছি।’ গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, নৌকার আদলে মঞ্চ বানানোর জন্য শেষ মুহূর্তে কাঠ- পেরেকের কাজ করছেন কারিগররা। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটি সূত্রে জানা গেছে, দলের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আয়োজনের মঞ্চ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আশপাশের এলাকাসহ মূল মঞ্চটি এমনভাবে করা হবে, দেখে মনে হবে নদীর বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে বিশাল এক নৌকা। নৌকার চারপাশজুড়ে থাকছে প্রমত্তা পদ্মার বিশাল জলরাশি। এর মধ্যে থাকছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুও। এ ছাড়াও পদ্মার জলতরঙ্গ, পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানো ছোট ছোট নৌকা, এমনকি চরের মধ্যে কাশবনের উপস্থিতিও থাকবে। মূল মঞ্চটি হবে দৈর্ঘ্য ১০২ ফুট আর প্রস্থে ৪০ ফুট। আর সামনের পদ্মা সেতুতে থাকবে ৪০টি পিলার। মঞ্চের যে নৌকাটি, সেটিও কোনো সাধারণ নৌকা হবে না। এই নৌকায় থাকবে জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি। নৌকার পালগুলোতে থাকবে দলীয় প্রতীকসহ অন্যান্য বক্তব্য। আর স্মৃতিসৌধের পেছনের দিকে থাকবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি। এ ছাড়া নৌকার পেছনের দিকে দেয়ালের মতো জায়গায় থাকবে জাতীয় চার নেতাসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে বিভিন্ন সময় অবদান রেখে আসা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি। এ ছাড়াও সম্মেলনস্থলে সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের বিশাল বিশাল ফেস্টুন, তাতে ছবি ছাড়াও থাকবে বিবরণ। শত শিল্পী ও কলাকুশলীর নিরলস প্রচেষ্টায় এগিয়ে চলেছে সম্মেলনস্থল প্রস্তুত করার যাবতীয় কাজ। মঞ্চ সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতি বছর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে রাজধানীজুড়ে সাজসজ্জা করা হলেও এবার তা করা হচ্ছে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া অন্য কোথাও তেমন সাজানো হবে না। কারণ আগামী বছর মুজিববর্ষ শুরু হচ্ছে। আমাদের মূল ফোকাস মুজিববর্ষকে ঘিরে।’ আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, একশ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি। খাদ্য উপকমিটি ইতিমধ্যে প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ২০ ডিসেম্বর সম্মেলনের সূচনা হলেও ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যাবে সম্মেলনের জন্য। এরপর ১৬ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার দিন সম্মেলনস্থল থাকবে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। তারা এই সময়ের মধ্যে সম্মেলনস্থলটি ঘুরেফিরে দেখতে পারবেন।

সর্বশেষ খবর