মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সেন্টমার্টিনে যত অনিয়ম

শিমুল মাহমুদ, সেন্টমার্টিন থেকে

সেন্টমার্টিনে যত অনিয়ম

অনিয়মের স্বর্গদ্বীপে পরিণত হয়েছে সেন্টমার্টিন। কেউ কোনো নিয়মকানুন মানছে না এখানে। অন্যভাবে বলা যায়, বিপুল সম্ভাবনাময় দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটির সামগ্রিক সংরক্ষণ ও কার্যকর ব্যবহারে কোনো নিয়ম-নীতিই নেই এখানে। প্রায় ৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপে বসবাস করেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। পর্যটন মৌসুমে দিনে ৫/৬ হাজার মানুষ সেন্টমার্টিনে আসে, রাত যাপন করে। কোনো কোনো দিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ সেন্টমার্টিনে আসে। ঘোষিত ১০৬টি হোটেল-কটেজের বাইরে এখন দ্বীপের ঘরে ঘরে পর্যটক কটেজ। অফ সিজনে নিজেদের থাকার ঘরগুলোই এখন ট্যুরিস্ট কটেজ হিসেবে রমরমা ব্যবসা করছে। সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপকে প্রতিবেশ সংরক্ষণ এলাকা হিসাবে পর্যটক আগমন নিষিদ্ধ করে সাইনবোর্ড টানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। সেই নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে অসংখ্য মানুষ। কেউ কোনো নিষেধ মানছে না। প্রতিদিন শত শত মানুষ ছেঁড়া দ্বীপ যাচ্ছে। প্রকৃতিবিরোধী নানা কর্মকান্ডে বিপন্ন করে তুলছে দ্বীপের পরিবেশ। সেন্টমার্টিনের সৈকতে মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ করা হলেও কেউ মানছে না সেই নিষেধাজ্ঞা। এখন টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল ভ্রমণ করা যায়। বেড়ানোর জন্য ভাড়ায় পাওয়া যায় বাইসাইকেল। বেপরোয়া সাইকেল, মোটরসাইকেল চলাচলে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সৈকতে। এ ছাড়া সেন্টমার্টিনের সর্বত্র শত শত কুকুরের উৎপাত। রাতে পর্যটকদের জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে এই নিয়ন্ত্রণহীন কুকুর। টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে একসময় মাত্র দুটি জাহাজ চলাচল করত। এখন দিনে সর্বোচ্চ নয়টি জাহাজ, ৩০টির বেশি কাঠের নৌকা ও অসংখ্য স্পিডবোটে ৫ হাজারের বেশি যাত্রী যাতায়াত করে। তারপরও এই রুট নিয়ে কাড়াকাড়ির শেষ নেই। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যাত্রী বহন করে সেন্টমার্টিন এসেছে পর্যটকবাহী আরও দুটি জাহাজ এমবি পারিজাত ও এমবি দোয়েল পাখি-১। টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজ ঘাট থেকে ৮ শতাধিক যাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনে আসে এই জাহাজ দুটি। এ নিয়ে বিদ্যমান শিপ অপারেটরদের মধ্যে তীব্র বিরোধ চলছে। টেকনাফ নৌ-পুলিশের পরিদর্শক মো. আবদুল্লাহ বলেন, এখানে কেউ নিয়ম মানতে চায় না। বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে এমবি পারিজাত ও এমবি দোয়েল পাখি-১ চলাচল বন্ধের একটি চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ সেন্টমার্টিনকে প্রাকৃতিক কাজে লাগানো এবং সেন্টমার্টিনের প্রবাল- শৈবাল, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ করছে পরিবেশ অধিদফতর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক)। এর মাধ্যমে প্রবালদ্বীপটি রক্ষার চেষ্টা চলছে। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইতিমধ্যে একটি নীতিমালা তৈরি হয়েছে। পর্যটন মৌসুমে (ডিসেম্বর-এপ্রিল) কতজন পর্যটক সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন, কতজন থাকতে পারবেন, কয়টি জাহাজ চলাচল করতে পারবে, তার সবকিছু নির্দিষ্ট করা থাকবে। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ইচ্ছা করলেই কেউ যেতে পারবেন না। যেতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন লাগবে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তি সেন্টমার্টিনে গেলে শাস্তি কিংবা অর্থদ  গুনতে হবে। এর লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার  তৈরির কাজ চলছে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজারের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়ে মিডিয়ায় আমার কথা বলার সুযোগ নেই। তবুও বলি, সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। এনিয়ে আমরা কাজ করছি। সেন্টমার্টিনে দিনে কতজন যেতে পারবেন এবং কতজন দ্বীপে রাত যাপন করতে পারবেন, তা নীতিমালার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর