চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। দল মনোনীত এই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোটের মাঠে এ পদে মনোনয়ন চাওয়া দলের অন্য ১৮ জন কাজ করবেন কিনা তা নিয়ে তৃণমূলে প্রশ্ন আছে। ইতিমধ্যে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে কাজ করার ঘোষণা দিলেও অন্যদের তেমন দেখা যাচ্ছে না বলে জানান দলীয় নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে এলাকায় আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে অনেকেই আশা করছেন, এখনো অনেক সময় আছে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রেজাউল করিমের পক্ষে মাঠে কাজ করবেন।
চসিক নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র চেয়েছিলেন বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ ১৯ জন। গতবার বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাবেক মেয়র মনজুর আলম মনজুও ছিলেন এ তালিকায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা বলেন, ক্ষমতাধর একাধিক নেতা এবং যোগ্য প্রার্থীরাও মনোনয়ন চেয়ে পাননি। আরেক বর্ষীয়ান নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় অন্য পদপ্রত্যাশীরা কতটুকু মাঠে নামবেন এবং কী কাজ করবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। অনেকেই দলীয় সভানেত্রীর মন জয় করতে মাঠে কাজ করলেও কৌশলী আচরণও করতে পারেন। এতে মেয়র পদে মনোনয়ন বঞ্চিতদের আদৌ কি পাশে পাওয়া যাবে রেজাউলের পক্ষে। সেই প্রশ্ন নেতা-কর্মীদের মধ্যে আছে। তবে এক ও অভিন্ন হয়ে কাজ না করলে মেয়র পদটি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানান তারা। বর্তমান চসিক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। রেজাউল করিম চৌধুরী একজন যোগ্য প্রার্থী। তার জয় সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এখানে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে কাজ করতে হবে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সম্মানিত করেছেন। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। জীবনে কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিচ্যুত হইনি। আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে চট্টগ্রামের উন্নয়ন করার জন্য চেষ্টা করব। তিনি বলেন, দল থেকে অনেকেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু নেত্রী আমাকেই দিয়েছেন। এতে যারা মনোনয়ন পাননি, তাঁরাও ঐক্যবদ্ধভাবে দলের প্রার্থীকে জয়ী করতে মাঠে কাজ করে যাবেন, এটাই বিশ্বাস করি। মনোনয়নপ্রত্যাশী সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলের মধ্যে অনেক প্রতিযোগিতা আছে, থাকবেই। এটা অনেক বড় দল, আওয়ামী লীগে অনেক যোগ্য প্রার্থীও আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁর পক্ষেই কাজ করতে হবে।
বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত আজকালের মধ্যেই : মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী এখনো সুরাহা হয়নি। তবে গতকাল থেকে বিএনপি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন ফরম ছাড়তে শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। গতকাল কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী কমিটির বৈঠকে যে সব সংসদীয় আসন শূন্য হয়েছে সেগুলোতে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে মনোনয়ন দৌড়ে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এগিয়ে থাকলেও নতুন করে নাম শোনা যাচ্ছে নগর বিএনপির সহসভাপতি ও তিনবারের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিয়াজ মোহাম্মদ খানের। এরপরেই রয়েছে সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সাবেক মেয়র মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিনের পুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদ উল্লাহর নাম।বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা গেছে, হঠাৎ করে নিয়াজ খানের নাম আলোচনায় আশায় খানিকটা অস্বস্তিতে পড়েছেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও তার সমর্থক নেতা-কর্মীরা। কারণ দীর্ঘদিন ধরে ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র নির্বাচনে আগ্রহ দেখিয়ে কাজ করে আসছিলেন। ফলে তার তৃণমূল পর্যায়ে অনেকটা মাঠ গোছানো রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ডা. শাহাদাত হোসেনকে গত জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল বিএনপি। ফলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শক্তিশালী ও অভিজ্ঞ কাউকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির জয়লাভের সম্ভানা রয়েছে বলেও মনে করছেন চট্টগ্রাম বিএনপির নেতা-কর্মীরা।