বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

‘অপারেশন বান্দর’ পাকিস্তানকে কতটুকু বদলাতে পারল?

প্রতিদিন ডেস্ক

বালাকোটে ‘অপারেশন বান্দর’ (বান্দর মানে বানর) অভিযান ঘটনার পর দেখতে দেখতে এক বছর হয়ে গেল। ২০১৯-এর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমানবাহিনী ওই অভিযান চালায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোটে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘জইশ-ই-মুহাম্মদ’-এর সন্ত্রাস প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর ওপর। এতে ছয়টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জইশের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ সদস্য মারা গিয়েছিল।

পুলওয়ামার ঘটনার বিপরীতে ভারত যে রকম দ্রুতগতিতে নির্ভুল লক্ষ্যভেদ করল তাতে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ থতমত খেয়ে যায়। মুখরক্ষার জন্য তারা নানারকম বুলি কপচিয়ে ‘ভারতীয় প্রপাগান্ডায়’ কর্ণপাত না করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, ‘ওই সফল অভিযানে ভারত ব্যবহার করে ১২টি মিরেজ-২০০০ ফাইটার বিমান। লেজার-গাইডেড বোমা ফেলেছে ১ হাজার কেজি। হামলায় খতম হয়ে যায় প্রশিক্ষিত ৩০০ জিহাদি। বিমানগুলো মিশন শেষ করে নিরাপদে ফিরে গেছে তাদের ঘাঁটিতে।’ ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে থাকায় পাকিস্তান দিন দিন অনেক মুসলিম দেশ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।’ পশ্চিমা দেশগুলোর পত্রপত্রিকায় এমন খবর কিছুদিন পরপরই ছাপা হয়। ওসব সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, অপারেশন বান্দর পাকিস্তানকে আত্মশুদ্ধির পথে নিতে পারেনি। কুখ্যাত জঙ্গি নেতারা এখনো পাকিস্তান এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের নানা স্থানে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভারতের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশে বিষোদগার করছে আর চাঁদাবাজি করছে। জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহার ও লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান হাফিজ সাইদের সন্ত্রাসীরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে পাকিস্তানে। সংগঠন চালানোর জন্য এরা তহবিল পায় কীভাবে? আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এমন প্রশ্ন তুলছে। প্যারিসভিত্তিক ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ) বারবার পাকিস্তানকে বলেছে, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অর্থ পাচার অপরাধে সংযুক্ত। ওদেরকে তোমাদের মাটি ব্যবহার করতে দিও না। এতে কাজ হয়নি। উল্টো দেখা যায়, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর ছত্রচ্ছায়ায় কুখ্যাত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী দাউদ ইবরাহিম করাচি নগরীতে তার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।

সর্বসাম্প্রতিক খবর : পিএটিএফ পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা ভাবছে। যেমন কালো তালিকায় রয়েছে ইরান ও উত্তর কোরিয়া, ঠিক তেমনই। তা-ই যদি হয়, পাকিস্তানের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। উদ্ধার পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তখন পাকিস্তানকে অপমানকর সব শর্ত পূরণ করতে বলবে। কালো তালিকাভুক্তি এড়ানোর জন্য ২৭টি পদক্ষেপ নিতে বলেছিল পিএটিএফ। এর মধ্যে দেশটি মাত্র পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলত, ২০১৮ সালে পাকিস্তানকে ‘ধূসর তালিকা’য় রাখা হয়। এখনো ওই জায়গাতেই সে রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, নামতে নামতে পাকিস্তান কালো তালিকায় ঢুকে যেতে পারে। পেশাগত দক্ষতার জন্য পুরস্কারে সম্মানিত পাকিস্তানি সাংবাদিক তাহা সিদ্দিকি বলেন, পাকিস্তান ‘ভালো জঙ্গি, মন্দ জঙ্গি’ নীতি অনুসরণ করে। পড়শি দেশে যারা সক্রিয় তারা ‘ভালো জঙ্গি’। ভিতরে যারা হুমকি-ধমকি দিয়ে শাসক শ্রেণির উপকার করে তারাও ‘ভালো জঙ্গি’। ২০০০ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে হত্যার চেষ্টা করায় তখন জইশ জঙ্গিদের সরকার ‘মন্দ জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে দমনাভিযানে নেমেছিল। পাকিস্তানি আইনপ্রণেতা মহসিন দাওয়ার বলেন, গত এক বছরে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এভাবে চলতে থাকলে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কমবে না। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বালাকোট অভিযানের পর কট্টরবাদী ২৭ জন জঙ্গি ফের সক্রিয় হয়েছে। এর মধ্যে আটজন বাস করে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে। ফের যদি ভারতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়, তাতে নয়াদিল্লি কঠোর প্রতিশোধাত্মক পথে যাবে। সবারই জানা উচিত : ভারতের আর্থিক শক্তি পাকিস্তানের চাইতে পায় ১০ গুণ বেশি।

সর্বশেষ খবর