রবিবার, ১৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ড স্থগিতের মেয়াদ বাড়ছে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

করোনা মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের (পারিবারিক কোটায়) অভিবাসন ভিসা সীমিতকরণ, বিদেশি কর্মী এবং অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের আগমন ঠেকাতে কঠিন বিধি আরোপের কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন। করোনাভাইরাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সেক্টরের নাজুক অবস্থার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বহু আমেরিকান বেকার হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা এসেছে, তা থেকে উত্তরণে সংক্ষিপ্ত কোনো উপায় কেউই দেখছেন  না। আমেরিকানদের বেকার রেখে বিদেশি শ্রমিক বা কর্মী আনতে আগ্রহী নয় ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ১২ জুন প্রকাশিত সংবাদে আরও উল্লেখ করেছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত (ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা, টেক্সাস) পথে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেই অ্যাসাইলাম প্রার্থনার যে প্রবণতা রয়েছে সেটি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ তারা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সীমান্তরক্ষীদের দৃষ্টি এড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করলেও কোনো লাভ হবে না। তাদের আবেদনের কোনো শুনানি (অ্যাসাইলাম অফিসার/ইমিগ্রেশন জজ) হবে না। সরাসরি তাদের সীমান্তের ওপারে, অর্থাৎ পুনরায় মেক্সিকোতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জারি করা এক নির্বাহী আদেশে গ্রিনকার্ড ইস্যুর কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন। এভাবে ট্রাম্প চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রে অস্থায়ীভাবে কাজের খোঁজে আসতে আগ্রহীদের জন্য ভিসার সংখ্যা একেবারেই কমিয়ে ফেলতে। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, আমেরিকানদের বেকার রেখে বিদেশি কর্মী বা শ্রমিক আমদানির কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এখন সময় হচ্ছে আমেরিকানদের চাকরি নিশ্চিত করার। যদিও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, অভিবাসীরাই সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রেখেছেন। স্মরণ করা যেতে পারে, পারিবারিক/বিশেষ ক্যাটাগরি/বিনিয়োগ/ব্যবসা ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অভিবাসন ভিসা স্থগিতের যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তা শেষ হওয়ার কথা এ মাসের ২২ তারিখে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস আবারও বিস্তৃত হওয়া শুরু করেছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুনরায় এটি মহামারী আকার ধারণ করতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করছেন।

একই দিন ওয়াশিংটন টাইমসে অপর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেটসমূহ থেকে লকডাউন উঠিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ মেক্সিকোতে ঘাঁটি গেড়েছে। তারা যে কোনো সময় সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করবে। এসব মানুষের ব্যাপারে ইতিমধ্যে সীমান্তরক্ষীদের সতর্ক করা হয়েছে।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় সূত্রে ১২ জুন এ সংবাদদাতা জানতে পেরেছেন, গত মাসে বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টাকালে ২৩ হাজার ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মাদক ব্যবসায়ীই বেশি। এর আগের মাসে গ্রেফতার হয় ১৭ হাজার। অর্থাৎ অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরুর পর ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। মে মাসে গ্রেফতার ব্যক্তিদের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা ও আফিম উদ্ধার করা হয়েছে। কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রোল চিফ মার্ক মরগ্যান বলেন, এমন পরিস্থিতির কারণেই সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় পুরো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কার্যক্রম শেষ হলে মাদক পাচারের ঘটনা অনেকাংশেই কমবে। বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবণতাও হ্রাস পাবে। মার্ক মরগ্যান উল্লেখ করেছেন, করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে কোনো সন্দেহজনক বিদেশিকে দেখলে কিংবা বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধরে সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দেওয়ার আইন কার্যকর রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এমন কঠোর নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে। কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রোল সূত্রে আরও বলা হয়েছে, এপ্রিল ও মে মাসে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে ৯৬ শতাংশকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের কোনো অ্যাটর্নি অথবা মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধকল্পেই এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, গত বছর মে মাসে গ্রেফতারের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪৪ হাজার। সে স্থলে এবার হয়েছে মাত্র ২৩ হাজার। এভাবেই বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমের প্রবণতাও আগের বছরের তুলনায় এ বছর অনেকাংশে কমেছে। গত বছর মে মাসে বেআইনিভাবে প্রবেশকালে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে ৭২ শতাংশের সঙ্গেই ছিল শিশুসন্তান অথবা বয়স্ক অভিভাবক। তারা এসেছিলেন সেন্ট্রাল আমেরিকা থেকে। গত মাসে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র নয় শতাংশের সঙ্গে শিশুসন্তান বা প্রবীণ অভিভাবক ছিল। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মেক্সিকান।

সর্বশেষ খবর