বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

জোন-লকডাউন নিয়ে যত বিভ্রান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জোন-লকডাউন নিয়ে যত বিভ্রান্তি

মঙ্গলবার দুপুর বেলা। রাজধানীর উত্তরা ১ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতি তাদের সেক্টর এলাকায় মাইকিং করে এলাকাবাসীকে জানাচ্ছিল, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এই এলাকা ‘রেড জোন।’ যেকোনো সময় লকডাউন ঘোষণা করা হবে। যাদের নিত্যপণ্যের প্রয়োজন তারা দ্রুত কেনাকাটা সেরে নিন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এলাকার সর্বস্তরের লোকজনদের নিয়ে সভা করেছেন গতকাল। এলাকায় লকডাউন কার্যকর হলে এখানকার লোকজনের সহযোগিতা চাওয়া হয় ওই সভায়। একই সঙ্গে স্থানীয়দের চলাফেরা সীমিত করাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়।

আর উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম শুরু থেকেই বলছেন, উত্তরের কোনো এলাকা রেড জোন করা হলে তাকে জানাতে হবে এবং লকডাউন কার্যকরের জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা সময় দিতে হবে।

গত কয়েকদিন ধরে ‘জোন’ এবং ‘লকডাউন’ নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি চলছে। কোন এলাকা রেড জোন করা হয়েছে, কোন এলাকা লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে- এ নিয়ে মানুষ যেমন বিভ্রান্তিতে আছেন, তেমনি দিনরাত তারা উৎকণ্ঠায়।

উপরের ঘটনাগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, লকডাউন নিয়ে এখনো সমন্বয়হীনতা রয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর এবং মাঠ প্রশাসনের মধ্যে। সরকারের দায়িত্বশীল অনেকের সঙ্গে কথা বললেও কেউ পরিষ্কার করে রেড জোন ও লকডাউন নিয়ে কিছু বলতে পারেননি। দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছিল, রেড জোন ঘোষণায় আরও কিছুটা সময় লাগবে। আর রেড জোন ঘোষণা হওয়ার পর লকডাউন কার্যকর করতেও কিছুটা সময় দরকার। এই রেড জোন আর লকডাউন নিয়ে সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে সর্বত্র লেজেগোবরে অবস্থা গত কয়েকদিন ধরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজেদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং রেড জোন ঘোষণা হলে সেই এলাকায় লকডাউন কার্যকর করতে যথেষ্ট প্রস্তুতির ঘাটতি বুঝা যাচ্ছে। তাছাড়া গত তিন-চার দিনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন লকডাউন করা হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ প্রচার হতে থাকে। এসব সংবাদে এলাকার নাম তুলে ধরা হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা আসেনি। আবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছিল, রেড জোন ঘোষণা করতে কিছুটা সময় লাগবে। এদিকে রেড জোন ও লকডাউন বিষয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই গতকাল সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে, এলাকাভিত্তিক কভিড-১৯ সংক্রমণের হার বিবেচনায় নিয়ে যখন যে অঞ্চলে প্রয়োজন, তখন সে অঞ্চলকে ‘রেড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।

এতে আরও বলা হয়, কোনো অঞ্চলকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হলে তা ২১ দিনের জন্য কার্যকর হবে। পরিস্থিতির উন্নতির ওপর ভিত্তি করে পরে ওই এলাকাকে ইয়েলো বা গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোন ঘোষণা বা রেড জোন পরিবর্তন করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। গত কয়েকদিন ধরে রেড জোন ঘোষণা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তা নিরসনে সরকার এই তথ্য ব্যাখ্যা দেয়। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শক্রমে প্রাথমিকভাবে তিনটি জেলা গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং নরসিংদীর কিছু এলাকা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পূর্ব রাজাবাজারে জোনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে জোনিং সিস্টেম চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য এলাকায় জোনিং সিস্টেম চালু বা পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হবে।  পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে ‘পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতেও একই ধরনের ব্যবস্থা নিতে এলাকা চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। দেশের অন্যান্য জেলা ও সিটি করপোরেশন বর্ণিত কৌশল ও গাইড অনুসারে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রয়োগপূর্বক স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামতের ভিত্তিতে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে। এতে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কারিগরী গ্রুপও অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকা-ভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং অধিকতর বাস্তবমুখী সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তদনুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংজ্ঞানুযায়ী যেখানে যখন প্রয়োজন তখন রেড জোন ঘোষণা করা হবে। কাজেই রেড জোন ঘোষণা বা রেড জোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন প্রয়োজন তা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে। এই বিষয়ে সবার বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর