বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই

হাট-বাজারে সামাজিক দূরত্ব মানে না কেউ, হোটেল রেস্টুরেন্টে ঠাসাঠাসি গণপরিবহনে পাত্তাই নেই

আরাফাত মুন্না

স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গতকাল স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই বসে আড্ডা দিতে দেখা যায় লোকজনকে -জয়ীতা রায়

সোমবার দুপুর পৌনে ২টা। পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারের নামকরা একটি বিরানির দোকানের ছয় টেবিলের ২৪টি চেয়ারেই বসে খাচ্ছে মানুষ। মাঝখানের রো-তে অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে আরও তিনজন। তাদের গা-ঘেঁষেই বিরানির প্লেট নিয়ে যাচ্ছে বেয়ারা। গেটে পার্সেল নিতে অপেক্ষায় আরও চার-পাঁচজন। সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার ন্যূনতম চিহ্নও নেই এখানে। এত গেল খাবারের দোকান। রাজধানীর কাঁচা বাজারের চিত্র আরও ভয়াবহ। ক্রেতাদের অনেকের মুখে মাস্ক থাকলেও বিক্রেতার মাস্ক থাকে থুঁতনিতে। গায়ে গা-ঘেঁষে চলাচল করেন ক্রেতারা। মাছবাজারেও একই অবস্থা। বড় শপিং মলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেলেও অনেক মার্কেট বিপণিবিতানে অধিকাংশ ব্যবস্থাই লোক-দেখানো। আর গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি পাত্তাই পায় না। সরকারি-বেসরকারি অনেক অফিসেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। এককথায় কেউ মানে না স্বাস্থ্যবিধি। গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত দেশের কিছু কিছু এলাকায় জরিমানা করলেও রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির পর সরকার গত ৩১ মে থেকে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, গণপরিবহন, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান চলাচলসহ সবকিছু খুলে দেয়। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং জরুরি কাজ সম্পন্ন করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে সরকার সবকিছু খুলে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু প্রথম দু-এক দিন সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও তার পর থেকে বেপরোয়া। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছিল কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার শর্তে। এখন যদি মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাহলে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাবে। যিনি মানবেন না, তিনি যেমন বিপদে পড়বেন, তিনি নিজের পরিবারকেও বিপদে ফেলবেন। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, এখনো যারা আক্রান্ত হননি, তাদের করোনাভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র পথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সরকারি অফিস ও দফতরগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা অনুসরণ করা হয়। ব্যাংক-বীমাসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের প্রচুর ভিড় থাকলেও শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায় না কাউকেই। সরেজমিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর মৈত্রী মাঠ, রেলগেট, মালিবাগ বাজার ও রেলগেট সংলগ্ন বাজার এবং রামপুরা বাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। তাদের কেউ কেউ হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক পরলেও অনেকে দুটির কোনোটিই পরেননি। নেই হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা। অনেকে কথা বলার সময় মাস্ক খুলে ফেলছেন। অনেক বিক্রেতা আবার মাল বিক্রির পর টাকা গুনতে থুতু ব্যবহার করছেন। জাকির নামে যাত্রাবাড়ীর তরকারি বিক্রেতা মাস্ক পরলেও সেটি দিয়ে নাক-মুখ না ঢেকে মুখের নিচের অংশ ঢেকে (থুঁতনি) রেখেছেন। তিনি বলেন, আসলে অনেক দিন হলো, এখন অনেকেই মাস্ক পরছেন না। মাস্ক না থাকলে আবার পুলিশ এসে ঝামেলা করে, তাই ঝুলিয়ে রেখেছি। গত দুই তিন দিনে রাজধানীতেই দেখা গেছে, গণপরিবহনে উঠতে গিয়ে লোকজন হুড়োহুড়ি করছে। একে অন্যের গায়ের ওপর গিয়ে উঠছে। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। যাদের আছে তারা আবার মাস্ক যা-তাভাবে ব্যবহার করছেন। নিয়ম মেনে খুব কম লোকই মাস্ক ব্যবহার করছেন। গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে এক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রীর বসার কথা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। দূরপাল্লার পরিবহনগুলো ঢাকা থেকে কিংবা অন্য জেলা থেকে ঢাকা কিংবা বড় শহরের দিকে যাত্রা করার সময় যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে পথে যাত্রী নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনে জীবাণুনাশকও ছিটাতেও দেখা যায়নি। অথচ স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী নিয়মিত বিরতিতে যানবাহনে জীবাণুনাশক ছিটাতেই হবে। ভিন্ন নয় লঞ্চের চিত্রও। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম লঞ্চেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। গাদাগাদি করে যাত্রী উঠানো হচ্ছে প্রায় প্রত্যেকটি লঞ্চে। এমনকি লঞ্চের কেবিনগুলোর দরজার সামনেও যাত্রীরা চাদর বিছিয়ে বসে বা শুয়ে পড়ছেন।

সর্বশেষ খবর