মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্ধ পৌনে চার শ গার্মেন্ট

অর্ডার কমেছে ৩০ শতাংশ, ক্ষতি সোয়া ৪ বিলিয়ন ডলার

রুহুল আমিন রাসেল

বন্ধ পৌনে চার শ গার্মেন্ট

মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে ৩৭৪টি পোশাক কারখানা বন্ধ হওয়ার তথ্য দিয়েছে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, করোনাকালে পোশাক কারখানাগুলোর ৩০ শতাংশ অর্ডার কমেছে। এই সময়ে মাত্র তিন মাসে রপ্তানিজনিত ক্ষতি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পরিস্থিতিতে আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পোশাকশিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা মালিকদের।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পোশাকশিল্পের আন্তর্জাতিক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। তারা ভয়ে আছে। অর্ডারও কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৯০০ কারখানা সচল রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা মুখে না বললেও বাংলাদেশ নিয়ে তারা ভয় পাচ্ছেন। ফলে কারখানাগুলোয় কাজ না থাকলে শ্রমিক ছাঁটাই ও লে-অফ বা কারখানা বন্ধ ঘোষণা হতে পারে বলে মনে করেন শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ-বিসিআইয়ের এই সভাপতি। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, কভিড মহামারীর কারণে বিশ্বে পোশাকের চাহিদা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাবে। এদিকে বিজিএমইএ জানিয়েছে, সংগঠনের ৩৪৮টি সদস্য কারখানা করোনাকালে বন্ধ হয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে রপ্তানিতে ক্ষতি হয়েছে ৪ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। আর বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছর মিলিয়ে ৬ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানি কম হয়েছে। অন্যদিকে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ জানিয়েছে, করোনার প্রভাবে ২৬টি বিকেএমইএ সদস্য কারখানা বন্ধ হয়েছে। ফলে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ মিলিয়ে সর্বমোট ৩৭৪টি পোশাক কারখানা বন্ধের তথ্য মিলেছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমানে ৩০ শতাংশ অর্ডার কমেছে করোনার প্রভাবে। আসছে আগস্টে একটা চিত্র পাওয়া যাবে। এখন আমরা সদস্য কারখানাগুলোর তথ্য সংগ্রহ করছি। আসলে এখন কারও কিছু করার নেই। বিশ্ব পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা পর্যবেক্ষণ করছি।’

বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ক্রেতারা ঈদের আগে শিপমেন্ট নেওয়ার জন্য তোড়জোড় করছেন। কিন্তু ঈদের পর কাজ নেই। বর্তমানে আমাদের সক্ষমতার মাত্র ২০ শতাংশ কাজ রয়েছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে খুব একটা কাজ নেই। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছি।’ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্র বলছেন, বাংলাদেশে গত মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক পণ্যের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারগুলো সংকুচিত হয়ে আসছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি ৫ জুলাই প্রকাশিত তথ্যে বলেছে, বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছর রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্য ছিল ৩৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর তৈরি পোশাক থেকে আয় হয়েছিল ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছর তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে এ খাতে আয় কমেছে ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের চেয়ে আয় কমেছে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

সর্বশেষ খবর