বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

চিরনিদ্রায় শায়িত শাজাহান সিরাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাজাহান সিরাজকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। গতকাল বাদ এশা গুলশান সোসাইটি মসজিদে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এর আগে দুপুরে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় ও বাদ জোহর কালিহাতীতে দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কালিহাতীতে শাজাহান সিরাজ কলেজ মাঠে তাকে রাষ্ট্রীয় ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সর্বস্তরের মানুষ তার জানাজায় অংশ নেন। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে মঙ্গলবার বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর এভার কেয়ার (সাবেক এ্যাপোলো) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ‘চার খলিফার’ অন্যতম শাজাহান সিরাজ। মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সিরাজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে শাজাহান সিরাজের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ ও তার মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং গভীর সমবেদনা জানান। গুলশান সোসাইটি মসজিদে নামাজে জানাজায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মিয়া, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শাজাহান সিরাজের মৃত্যুতে ইতিহাসের আরেকটি পাতা ঝরে পড়ল। জাতির দুর্ভাগ্য, নতুন প্রজন্মকে এ ইতিহাস জানানো হয় না। ওই সময় দুজন তরুণ আ স ম আবদুর রব ও শাজাহান সিরাজ দেশের স্বাধীনতার ঝা া তুলে ধরেছেন। আমি এ জন্যই শাজাহান সিরাজকে সালাম জানাতে এসেছি। শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনও। এ ছাড়াও শোক জানিয়েছেন, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি (একাংশ) সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, ’৯০-র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাইফ উদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুৎফর রহমান, সালাহউদ্দিন তরুণ ও আসাদুর রহমান আসাদ। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, দুপুর ১২টায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় সরকারি শামসুল হক কলেজ মাঠে ও দুপুর ২টায় কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজ মাঠে জানাজা সম্পন্ন হয়। কালিহাতী কলেজ মাঠে জানাজায় অংশ নেন কালিহাতী আসনের সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, কালিহাতী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র আলী আকবর জব্বর এবং এলেঙ্গা কলেজ মাঠে জানাজায় অংশ নেন-  কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, কালিহাতী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শুকুর মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম আল মামুন মুকুল এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী।

এর আগে মরদেহ ঢাকা থেকে এলেঙ্গা ও কালিহাতী শাজাহান সিরাজ কলেজ মাঠে পৌঁছালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় উপস্থিত জনগণ মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কথা স্মরণ করেন।

ফোনে শাজাহান সিরাজের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর সান্ত্বনা : বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সিরাজের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, প্রধানমন্ত্রী ফোনে শাজাহান সিরাজের স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ ও তাঁর মেয়ের সঙ্গে কথা বলে শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন এবং গভীর সমবেদনা জানান। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে শাজাহান সিরাজের অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শাজাহান সিরাজ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৭০ সালে শাজাহান সিরাজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখনকার উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের পুরোধা হিসেবে ছাত্রলীগের যে চারজনকে ‘চার খলিফা’ বলা হতো, তার একজন ছিলেন শাজাহান সিরাজ। ‘চার খলিফা’র অন্য তিনজন ছিলেন ডাকসুর তখনকার ভিপি আ স ম আবদুর রব, ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী এবং ডাকসুর তৎকালীন জিএস আবদুল কুদ্দুস মাখন (প্রয়াত)।

স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রস্তুতি পর্বে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ছাত্রসমাজের পক্ষে স্বাধীনতার ইশতেহার পড়েছিলেন শাজাহান সিরাজ। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন অন্যতম ছাত্রনেতা ছিলেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনবার জাসদের ও একবার বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার সরকারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ছিলেন।

সর্বশেষ খবর