শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই বছর পর জানা গেল কান্তার নিখোঁজের রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রায় দুই বছর পর জানা গেল মার্জিয়া সুলতানা কান্তার (২৬) নিখোঁজের রহস্য। কান্তা ছিলেন বিউটিশিয়ান। থাকতেন ঢাকার আশুলিয়ায়। তিন বছর আগে শহিদুল ইসলাম সাগর (৩৮) নামে একজনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। বিয়ের বছরখানেক পর স্বামী সাগর তাকে বেড়ানোর কথা বলে শরীয়তপুরে নিয়ে যান। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন তারা। এরপর থেকে নিখোঁজ কান্তা। তার স্বামীও সঠিক তথ্য জানাতে লুকোচুরি করতে থাকেন। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দীর্ঘ অনুসন্ধানে এ নিখোঁজ রহস্য উদঘাটন করেছে।

গত ২ সেপ্টেম্বর তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন কান্তাকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আল মদিনা নামে হোটেলে নিয়ে হত্যা করেছেন সাগর। সাগর ছিলেন এক ধরনের  ‘সিরিয়াল ফ্রট’। নানাভাবে বিভিন্ন পেশার নারীদের পটিয়ে বিয়ে করতেন। এরপর তার বাবা কিংবা ওই নারীর সব সম্পদ হাতিয়ে নিতেন। এমন ভয়াবহ প্রতারণার গোপন কিছু তথ্য কান্তা জেনে ফেলেন। নিজের অপকর্ম ফাঁস হওয়ার ভয়ে কান্তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন সাগর। হোটেলে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যান সাগর। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কুয়াকাটার ওই হোটেল থেকে কান্তার লাশ সরিয়ে ফেলেন হোটেল মালিক ও তার ভাই। এ বিষয়ে আজ নরসিংদী পিবিআইর সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান এ প্রতিবেদককে জানান, সেপ্টেম্বরের ওই দিন হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ সেখানে যায়। হোটেল মালিক তাদের জানিয়েছিলেন, কান্তা নামে এক নারী, তার স্বামী সাগর ও সাগরের এক আত্মীয় মামুন পর্যটক হিসেবে তাদের হোটেলে রুম ভাড়া নেন। পর দিন তাদের রুম বাইরে থেকে তালা দেওয়া দেখা যায়। দুই দিন পরও ওই রুমে কেউ না এলে তারা টুরিস্ট পুলিশকে খবর দেন। নকল চাবি দিয়ে রুমের তালা খুলে ভিতরে দেখা যায় একটি ব্যাগে নারীর শুধু জামা আছে। পুলিশ চলে যাওয়ার পর তারা সেখানে লাশ খুঁজে পান। পরে লাশ গোপন করতে হোটেল মালিক দেলোয়ার ও তার ভাই তা সাগরে ভাসিয়ে দেন। এর আগে মেয়ে নিখোঁজের প্রায় তিন মাস পর আদালতের শরণাপন্ন হন কান্তার বাবা সোহরাব হোসেন রতন। তিনি গত বছরের ২০ জানুয়ারি নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অভিযোগ করেন। আদালত ২৪ জানুয়ারি তার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে নথিভুক্ত করতে নরসিংদীর বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তদন্ত সম্পন্নের নির্দেশ দেয়। পরে বেলাব থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ৩১ জানুয়ারি মামলাটি গ্রহণ করেন।  আদালতে দাখিল করা অভিযোগে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট কান্তাকে বিয়ে করেন সাগর। ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট নির্যাতনের পর দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে কান্তাকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন সাগর। এর মাসখানেক পর সাগর নরসিংদীতে কান্তার বাবার বাড়িতে যান এবং তাকে আশুলিয়ার জামগড়ায় তাদের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর যশোর বেড়াতে যাবে বলে ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে যান। এরপর থেকে সাগরের ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রায় তিন মাস মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে গত ১০ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরবামনেরচরে (খলিগঞ্জ) সাগরের গ্রামের বাড়িতে যান সোহরাব হোসেন রতন। সেখানে সাগরের কাছে তার মেয়ের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে সাগর তাকে বলেন, কান্তা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এ কথা বলে উল্টো তাকে আরও গালিগালাজ করেন এবং নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন। পরে ফোন করে তার মেয়েকে জীবিত ফেরত পেতে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সাগর জানিয়েছেন, প্রথমে তারা শরীয়তপুর পৌরসভায় ৫ তলাবিশিষ্ট হোটেল নুর ইন্টারন্যাশনালে তার এক বন্ধুর পরিচয়ে অবস্থান করেন। ওই হোটেলে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে এক হাজার টাকা ভাড়ায় ৩০৭ নম্বর রুমে তারা ছিলেন। ওই হোটেলে অবস্থানকালে সাগর নিজের ফোন বন্ধ করে কান্তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরে বিভিন্ন স্থানে কথা বলেন। ওই রাতে কান্তার নম্বরে তার বাবা ফোন দিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চাইলে তা রিসিভ করে সাগর তাকে জানান, কান্তা ঘুমাচ্ছে। শরীয়তপুর থেকে তারা কুয়াকাটায় চলে যান। কান্তার বড় বোন রিতা জানান, তার বোন নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে খবর নিয়ে জানতে পারেন, সাগরের বিভিন্ন জেলায় একাধিক বিয়ে ছিল। সে যেখানেই গেছে সেখানেই একটি করে বিয়ে করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর