রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

৩০ বছর পর ভোটাধিকার আজও সুদূরপরাহত

-বজলুর রশীদ ফিরোজ

৩০ বছর পর ভোটাধিকার আজও সুদূরপরাহত

নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের অন্যতম নেতা, তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, এরশাদ পতনের ৩০ বছরেও স্বৈরাচারের যে বিধিব্যবস্থা বা শাসনব্যবস্থা তা থেকে আমরা মুক্তি পাইনি। একটি গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ভোট দিয়ে যে মন্ত্রী-এমপি নির্বাচিত করা হয়, সেই ভোটাধিকারও এখন সুদূরপরাহত। নির্বাচন এখন নির্বাসনে। গতকাল বিকালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে        ফোনালাপে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য বলেন, যে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার জন্য আমরা লড়াই করেছিলাম, তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। দেশে এখন আইনের শাসন নেই। ন্যায়বিচার নেই। বিচারবহির্ভূত হত্যা বেড়েই চলেছে। নারী নির্যাতন, শিশু ধর্ষণসহ সমাজে নানা ধরনের নির্যাতন অবক্ষয় বেড়ে গেছে। সাবেক এই ছাত্রনেতা অতীতের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আমি স্বৈরাচার এরশাদের জেলখানা থেকে মুক্তি পাই। এর আগে ১৬ অক্টোবর হরতালের সময় গ্রেফতার হই। জেল থেকে বের হয়ে পল্টনে জনতার জয় সম্প্রচার মঞ্চে যোগ দিই। এটা সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের পক্ষ থেকে করা হয়। আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, যে সামরিক আইন জারি ছিল তা হটিয়ে গণতান্ত্রিক আইন, রীতিনীতি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। শুরুতে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, সংগ্রামী ছাত্রঐক্য ছিল। কিন্তু জেহাদ মারা যাওয়ার পর তার লাশ সামনে রেখে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, সেখানে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের ১০ দফা দাবি ছিল। শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পাঁচ দফা ছিল। কৃষক খেতমজুরদের ১৭ দাবি ছিল। ঐক্যবদ্ধ নারীসমাজ নামে একটি নারী সংগঠনের কিছু দাবি ছিল। এর বাইরে সম্মিলিত আইনজীবী পরিষদ, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর ব্যানারে কিছু দাবিদাওয়া ছিল। সব দাবি একসঙ্গে করে ১৯ নভেম্বর তিন আন্দোলনকারী জোটের একটি রূপরেখা প্রণয়ন হয়। সরকারের পতন কীভাবে হবে, পতনের পর কীভাবে সরকার গঠন হবে এসব নিয়েই মূলত রূপরেখা হয়। তিনি বলেন, ’৯০-এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়েছে। এমনকি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িকতা যেখানে ’৯০-এর স্বৈরাচারের সঙ্গে একাকার ছিল সেই সাম্প্রদায়িক শক্তিও কিন্তু মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, আগামী বছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে। সেই ৫০ বছর পরে এসে আমরা দেখলাম বাংলাদেশের জনগণ যাদের পরাজিত করেছে, তাদের এ দেশের শাসকরা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। নব্বই সালে যে স্বৈরাচারকে এ দেশের জনগণ পরাজিত করল, তাদেরও শাসকরা প্রশ্রয় দিচ্ছে। অর্থাৎ জনগণ যাদের পরাজিত করে শাসকশ্রেণি তাদের কোলে তুলে নেয়। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা, গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা আজও অধরা রয়ে গেছে। অসংখ্য শহীদের আত্মদানে তাদের যে আকাক্সক্ষা, তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সেই সংগ্রাম এখনো জারি আছে, এটা অব্যাহত থাকবে।

সর্বশেষ খবর