শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পররাষ্ট্রনীতিতে সতর্কতা ও তৎপরতা বাড়ানো দরকার

-অধ্যাপক রুহুল আমীন

পররাষ্ট্রনীতিতে সতর্কতা ও তৎপরতা বাড়ানো দরকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেছেন, সাগরে যখন রোহিঙ্গারা ভাসছিল। তখন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ চীনও বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে, ‘আপনারা নেন’। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমরা তো নেবই। আপনারা কেন নেবেন না?’ শেষ পর্যন্ত আমরা নিলাম। জাতিসংঘ বা অন্য বড় রাষ্ট্রগুলো একই ধারায় চলছে। তারা যত পারছে বাংলাদেশের ওপর দায় রাখছে। নিজেরা দায় নিচ্ছে না। সেজন্য আমাদের সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে আরও বেশি কার্যকর ও গণমুখী করা প্রয়োজন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন। অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, বছরের পর  বছর লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের সামরিক এবং বেসামরিক বৌদ্ধ জান্তারা নির্যাতন করেছে। একের পর এক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে, সাগরে ভাসছে, মারা যাচ্ছে। সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে অনুরোধ করছে, তাদের আশ্রয় দিন, কেউ নিচ্ছে না। সেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের জনগণ তাদের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় স্থান দিয়েছে। তাদের বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকার আশ্রয় দিয়ে অসাধারণ মানবিক কাজ করেছে। এ জন্য তারা সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার দাবি রাখে। তবে এখন এত বেশি সংখ্যায় তারা কক্সবাজারে এসেছে, সেখানে তাদের সংকুলান হচ্ছে না। তাদের কোনো না কোনো জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হলো। জাতিসংঘ, দাতা সংস্থা, সুশীল সমাজ অনেকেই আপত্তি করেছে। কিন্তু এরপরও যে তাদের স্থানান্তর করা দরকার, এ ব্যাপারে আমরা একমত। তিনি বলেন, ভাসানচরে যে সমস্যা আছে, সে সমস্যা আস্তে আস্তে সমাধান করা যাবে। এটা এমন কঠিন কিছু নয়। এটাকে পরিবেশবান্ধব এবং যথাযথ জরিপ পরিচালনা করে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করতে হবে। সেটা নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কাজ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি আরও সতর্ক ও তৎপর হওয়া দরকার। ভাসানচরে স্থানান্তর করে যদি তাদের এমন ধারণা দেওয়া হয় তারা একসময় (যেতে চাইবে না)। ইহুদিরা যেমন ইসরায়েলে স্থায়ী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করল, তেমনি রোহিঙ্গারাও একসময় বাংলাদেশ থেকে যেতে চাইবে না। আরাম ও নিরাপদ জায়গা থেকে তারা যেতে চাইবে না।  আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় হলো, তাদের নাগরিকত্ব এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। এটাই সরকারের আশু কর্তব্য যে তারা এ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ জাতীয় বিষয়গুলোতে আমাদের জাতীয় ঐক্য থাকা দরকার। আমি খুব অবাক হই, এসব ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো দ্বিধাবিভক্ত। এটা কেন হবে। এখানেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এখানে সরকারি বা বিরোধী দল উভয়ের দায় রয়েছে। সবাই মিলে সভা,  সেমিনার সিম্পোজিয়াম করে আমাদের একটি জায়গায় আসতে হবে যে এ বিষয়ে আমাদের নীতি কী হবে। এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক জনমতকে আমাদের অনুকূলে আনতে পারব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর