বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অনলাইনে ব্যবসা বেড়েছে

রুহুল আমিন রাসেল

অনলাইনে ব্যবসা বেড়েছে

সারা দেশে ব্যবসা বেড়েছে অনলাইনে। ঘরে বসে ক্রেতারা পাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের খাবার। আছে বাজার, শাড়ি, গয়নাসহ সবকিছুই। বিদেশ থেকেও পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। জানা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি ফেসবুকে কয়েক লাখ নারী উদ্যোক্তার অংশগ্রহণে ই-কমার্সে দেশীয় পণ্যের শক্ত ভিত্তি গড়ে উঠেছে। হাতে তৈরি বা প্রান্তিক পর্যায় থেকে আনা পণ্য দিনরাত অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দেশে ই-কমার্সের বাজার দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। যা চলতি বছর ২ বিলিয়ন এবং ২০২৩ সালে ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর তথ্য দিয়েছে জার্মানিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা। জানা গেছে, এখন বাড়ছে অনলাইনের প্রচার ও প্রসার। শপিং মল বা রেস্তোরাঁর বদলে মানুষ এখন ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করছেন পছন্দের পণ্য। ওষুধ, পোশাক, খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের পণ্য কেনাকাটা করছেন অনলাইন প্ল্যাটফরম থেকে। দরিদ্র কিংবা নিম্নমধ্যবিত্তরা বাজারমুখী হলেও মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তরা অনলাইনে কেনাকাটা করছেন বেশি। বিক্রি বাড়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা। সন্তুষ্ট ক্রেতারাও। ব্যবসার পরিধি বাড়ানো ও ক্রেতা ধরে রাখতে ব্যবসায়ীরা নিত্যনতুন ছাড় দিচ্ছেন। অনলাইনে পোশাক, গয়না, খাবার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, কসমেটিক্স, সবজিসহ সবকিছুই মিলছে। ফলে প্রচলিত বিক্রয় ব্যবস্থার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে গ্রাহক পর্যায়ে সরাসরি পণ্য পৌঁছে দিতে দেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ই-কমার্স ব্যবসা। এ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামীতে প্রচলিত ব্যবসার অস্তিত্ব থাকবে না। এখন করোনা আমাদের যেমন সংকটে ফেলেছে, তেমনি আবার বহু বছর এগিয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে দুই থেকে আড়াই গুণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন অনলাইনে যেমন পণ্য কিনছে, তেমনি বিক্রিও করছে। যা আগে কল্পনাও করা যেত না। সামনের দিনগুলোতে আমাদের চারপাশের জীবন ধারাই বদলে যাবে। তৃণমূল্যের নারী উদ্যোক্তাদের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, পুরুষ উদ্যোক্তার সঙ্গে প্রায় ১১ লাখ নারী উদ্যোক্তাও ফেসবুকে পণ্য বিক্রি করছেন। এটা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় প্রাপ্তি। এ প্রসঙ্গে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রাজিব আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ই-কমার্সের বাজার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এখন ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। এই খাতে করোনাকালে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন ইন্টারনেটের চাহিদা অনুধাবন করেছে। তবে চ্যালেঞ্জ হলো- গ্রামে গ্রামে পণ্য ডেলিভারি। এটা সহজ করতে হবে। এক্ষেত্রে এনজিও ও বিকাশের এজেন্টদের মাধ্যমে পণ্য ডেলিভারির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তার মতে- নারী উদ্যোক্তাদের ফেসবুকভিত্তিক প্ল্যাটফরম উইতে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হাতে তৈরি দেশি পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে গেছে।  তথ্য মতে, সারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের ফেসবুক বা অনলাইনভিত্তিক সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফরম হলো- উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম বা উই। এখানে সদস্য সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়েছে। এখানকার নারী উদ্যোক্তারা নিজের হাতে তৈরি পোশাক, খাবার থেকে শুরু করে সব পণ্যই বিক্রি করছেন। 

এ প্রসঙ্গে উই সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উইর ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে সারা দেশে ১১ লাখ নারী উদ্যোক্তার ভালো ভিত্তি তৈরি হয়েছে। ভালো কেনাকাটা চলছে। সর্বশেষ-তৃণমূলের নারী উদ্যোক্তারা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এ মেলায় অংশ নিয়ে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে কাজ করছি। ই-ক্যাব সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ই-কমার্স বাড়ছে খুবই দ্রুত। গত তিন বছর ধরে এই খাতের প্রবৃদ্ধি প্রায় এক শ ভাগ। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে এই খাত। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে প্রায় ১২০০ প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত। সব ধরনের পণ্যই এখন বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাবেচা হয়। তবে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের ই-কমার্স এখনো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। অনলাইনে অর্ডার দেওয়া গেলেও এখনো নগদ অর্থেই লেনদেন বেশি। এটাকে বলা হয় ক্যাশ অন ডেলিভারি। অর্ডার অনলাইনে দেওয়া হলেও কল সেন্টার থেকে ফোন করে সেটি আবার নিশ্চিত করা হয়। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পণ্য কাস্টমারের কাছে পৌঁছে দিয়ে নগদ টাকা নিয়ে আসে।  এ প্রসঙ্গে ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যবসা এখন অনেক ভালো চলছে। করোনার ৮ মাসে ই-কমার্সের লেনদেন হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ ডেলিভারি হচ্ছে। ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। ১৬ হাজার কোটি টাকার সার্বিক ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে ৬০ লাখ মানুষকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন ই-কমার্স আইন। ই-ক্যাবের তথ্যমতে, ক্রেতারা মূলত শহরকেন্দ্রিক। ই-কমার্সের ৮০ শতাংশ ক্রেতাই ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের। এদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ ঢাকার, ৩৯ শতাংশ চট্টগ্রামের এবং ১৫ শতাংশ গাজীপুরের। অন্য দুটি  শহর  হলো-  নারায়ণগঞ্জ  ও সিলেট। ৭৫ শতাংশ ই-কমার্স ব্যবহারকারীর বয়স ১৮-৩৪-এর মধ্যে। দেশে ই-কমার্স খাতের বিকাশের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- ই-কমার্স সহায়ক উপযুক্ত জাতীয় নীতিমালা, ই-কমার্স উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ, আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা, ধীরগতিসম্পন্ন ও ব্যয়বহুল ইন্টারনেট, ডেলিভারি চ্যানেল, ইন্টার-অপারেবল অবকাঠামো, দক্ষ ই-কমার্স প্রযুক্তি সহায়ক প্রশাসন ও মানবসম্পদের অভাব। আরও চ্যালেঞ্জ হলো- আস্থাশীল ই-কমার্স পরিবেশের অভাব, অনলাইনে কেনাকাটায় জনসাধারণের অভ্যস্ততার অভাব ও ভীতি। ভোক্তা অসন্তোষ নিরসনের সুনির্দিষ্ট মেকানিজমের অভাব। ই-কমার্স খাতে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদানে অনীহা। ই-কমার্স খাতের বিকাশে কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ না থাকা এবং পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাব ইত্যাদি। এমন প্রেক্ষাপটেই ই-কমার্সের বিশ্বে বাংলাদেশ ৪৬তম অবস্থানে থাকার তথ্য দিয়েছে জার্মানির গবেষণা সংস্থা স্ট্যাটিস্টা। সংস্থাটির সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজার দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা চলতি বছর বেড়ে হবে ২ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ডলার। আর আগামী ২০২৩ সালে বাজারের আকার হবে ৩ হাজার ৭৭ মিলিয়ন ডলার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর