বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সাগরতীরের অপরূপ অপ্সরী পতেঙ্গা সৈকত

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

সাগরতীরের অপরূপ অপ্সরী পতেঙ্গা সৈকত

দিগন্তবিস্তৃত সাগর। সাগর পাড়ে রংবেরঙের পাথর। ঢেউয়ের তালে সফেদ পানির আছড়ে পড়া দৃশ্য। সঙ্গে ঢেউয়ের গর্জন। আছে সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশি, পশ্চিমাকাশে সূর্য অস্তমিত হওয়ার নয়নাভিরাম চিত্র, সুসজ্জিত বাগানের ফুলের সৌরভ, বিনোদনের ফাঁকে একটু বসার আয়েশি বিশ্রাম-চেয়ার, দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়েতে আছে হাঁটার সুযোগ, সমুদ্রের বালুচরের চিকচিকে বালুকণা- সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর, নান্দনিক দৃশ্য। এমন নয়নাভিরাম পরিবেশ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের। চট্টগ্রামে বিনোদনের আঙিনায় যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা, যেন সাগরতীরে অপরূপ এক অপ্সরী। রূপ খুলেছে সাগরের মোহনীয় সৌন্দর্যের। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হাতছানি দিচ্ছে বিনোদনপ্রেমীদের। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন কাজ বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ  (সিডিএ)। প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী আসছে সৈকতে। সিডিএ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্র্রকল্পের অধীনে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের উন্নয়ন কাজ করছে। ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত তৈরি করা হচ্ছে ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সিটি আউটার রিং রোড। প্রকল্পের আওতায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়েছে। সামগ্রিক উন্নয়নের ফলে সমুদ্রসৈকতে চার স্তর থেকে উপভোগ করা যাচ্ছে সমুদ্র দর্শন। এর মধ্যে আছে- সমুদ্রের দিকে নামার পথে ৩০ ফুট প্রশস্তের হাঁটাপথ, সুসজ্জিত বাগানের রংবেরঙের বর্ণিল ফুল, বসার জন্য হাজারো আসন। সেই পথ ধরে হাঁটা যাবে সৈকতে, মিলবে সমুদ্রের লোনাপানি ছোঁয়ার স্বাদ। পাঁচ কিলোমিটারের সৈকতকে জোন-১ ও জোন-২-এ ভাগ করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘প্রথম ভাগের কাজ শেষ। এর মধ্যে আছে পাঁচ কিলোমিটার হাঁটাপথ, বয়স্কদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র, কিডস জোন, বিভিন্ন ধরনের মেকানিক্যাল ও নন-মেকানিক্যাল রাইড। সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়েতে একসঙ্গে ৫০ হাজার মানুষ হাঁটতে পারবে। আছে সুসজ্জিত বাগান ও কেবল কার। সঙ্গে থাকছে বোটিংয়ের জন্য জেটি ও কার পার্কিং। রাতের সমুদ্রদর্শনের জন্যও আছে নানা আয়োজন। পুরো এলাকাজুড়ে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। অন্যদিকে জোন-২ অঞ্চলে করা হবে বিশদ পরিসের সৌন্দর্যবর্ধন, হোটেল-মোটেল, শপিং মল, আধুনিক মানসম্পন্ন প্লাজা, কনভেনশন হল, সুসজ্জিত বাগান।’ তিনি বলেন, দুটি জোনে লাখো পর্যটকের জন্য থাকবে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। প্রকল্পে থাকছে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ৩০ ফুট উচ্চতার উপকূল রক্ষা বাঁধ। বাঁধের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ১০০ ফুট প্রস্থের সড়ক। বাঁধে আছে ১১টি শক্তিশালী স্লুইস গেট ও ওয়েব প্রটেকশন ওয়াল। এ ছাড়া সড়কটির সঙ্গে মূল শহরে যোগাযোগব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে পতেঙ্গা র‌্যাব-৭ রোড, বন্দর টোল রোড এবং সাগরিকা রোডের সঙ্গে রাখা হয়েছে ফিডার রোডের ব্যবস্থা। প্রতিটি ফিডার রোডের মাথায় বাংলাদেশের প্রথম ডবল রাউন্ডঅ্যাবাউট ব্রিজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জানা যায়, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় যুক্ত হয়েছে আরও কিছু নান্দনিক দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। সমুদ্রপাড়ের আউটার রিংরোড এখন বেড়ানোর নতুন এক অনুষঙ্গ। পাশেই নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস ঈসা খান, চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন জেটি এবং বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি। বিমানবন্দরগামী রাস্তার মুখে আছে প্রজাপতি পার্ক। এ ছাড়া মেরিন ড্রাইভ, এক্সপ্রেসওয়েসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পকে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব প্রকল্প সাগরপাড় এলাকা এবং পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। পক্ষান্তরে নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে এসব বিনোদন কেন্দ্র এবং নান্দনিক জায়গাগুলোয় যানজটবিহীন সাধারণ মানুষ যাতায়াত করতে পারবেন। একদিকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বৃহত্তম পর্যটন এলাকা, অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যানজট মুক্ত হবে নগর, ৩০ মিনিটে পৌঁছানো যাবে বিমানবন্দরে, পতেঙ্গা সমুদ্র এলাকায় মিলনমেলা হবে পর্যটকদের। মিলবে বহুমাত্রিক সুফল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর