শিরোনাম
বুধবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলুকে বনানীতে দাফন

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক

অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলুকে বনানীতে দাফন

নাট্যাঙ্গনের মানুষদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন অভিনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান দিলু। গতকাল ভোরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক  মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে মুজিবুর রহমান দিলুকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। এর আগে বিকাল ৩টায় শিল্পকলা একাডেমিতে এই মুক্তিযোদ্ধা অভিনেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা। শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে মুজিবুর রহমান দিলুর মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, শিল্পকলা একাডেমি, নাটকের দল থিয়েটারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

মরহুমের ছোট ছেলে অতুল রহমান দেশের বাইরে থাকায় দাফনে অংশ নিতে পারেননি। তার পাঠানো একটি ভয়েস রেকর্ড পড়ে শোনান বড় ছেলে অয়ন রহমান। অভিনেতা মুজিবুর রহমান দিলুর বড় ভাই নাট্য নির্দেশক আতাউর রহমান বলেন, আমরা ছয় ভাই ও দুই বোন ছিলাম। আমি সবার বড়। আজ আমাদের এক ভাই চলে গেল। পনেরো বছর আগে গুলেনিয়া বারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েও সে ফিরে এসেছিল। দিলুর ছিল অপূর্ব জীবনীশক্তি। সেই জীবনীশক্তির কারণেই সে অপরাজিত। কাউকে না বলে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়ে দিলু মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল, প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। যুদ্ধ শেষে যখন ফিরে আসে তখন তার রণক্লান্ত অবস্থা দেখে তাকে চেনার উপায় ছিল না। তখন আমি কাজ করি এক বিদেশি সংস্থার অফিসে। সে আমার অফিসে এসেছিল। অনেক কথার পর তাকে আমরা চিনতে পারি।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, মাত্র ১৮ বছর বয়সে অভিনেতা দিলু মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সে যখন মুক্তিযুদ্ধে গেল, তখন সে ভালো করেই জানত এ মহান কাজে তাকে জীবনও দিতে হতে পারে। কিন্তু সে ছিল অকুতোভয়। সে আমাদের সঙ্গে ঢাকা-২ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছিল। যুদ্ধকালীন সময়ে আমাদের বেশ কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলো। তখন আমাদের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ দায়িত্ব দিলেন, এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করতে হবে। কাজটা বেশ কঠিন। দিলুর ওপর দায়িত্ব পড়ল ঢাকা কলেজ বন্ধ করার। সে দিনদুপুরে সাধারণ ছাত্রের বেশে ঢাকা কলেজে ঢুকে পড়ল। তখন সবাই জেনে গেছে, দিলু গেরিলা যোদ্ধা। দিলু ত্বরিত গতিতে বোমা মেরে চলে এলো। ঢাকা কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। দিলু যখন মঞ্চে এলো, তখন ‘আমি গাধা বলছি’, ‘নানা রঙের দিনগুলো’ কীভাবে তাকে জনপ্রিয়তা এনে দিল সে তো আমাদের চোখের দেখা। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন অভিনেতা দিলু। তার লক্ষ্যই ছিল, ভালো কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখা। যারা নীরবে নিভৃতে দেশ, সমাজ ও শিল্পের উৎকর্ষ সাধনের জন্য কাজ করে যান, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা সবসময়ই আমাদের আলাদা রকম বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর