রবিবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ

আপ্যায়ন ও প্রচারে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি টাকা

তিনবার নাকচের পর চতুর্থবারের চাহিদাপত্রে সম্মতি অর্থবিভাগের

মানিক মুনতাসির

আপ্যায়ন ও প্রচারে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি টাকা

কভিড-১৯ ভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রচার-প্রচারণা ও আপ্যায়নে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি টাকা। গত বুধবার এই পরিমাণ টাকার অনুমোদন দিয়েছে অর্থবিভাগ। এর আগে তিনবার এ খাতে টাকা চেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেগুলো নাকচ হয়। ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর পর চতুর্থবারের চাহিদাপত্রে অনুমোদন দিল অর্থবিভাগ। তবে এ অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভ্যাকসিন কিনতে দুই দফায় ৭১৯ ও ৭৩৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার ৭১৯ কোটি টাকা ছাড় করার সময়ও আপ্যায়ন ব্যয় নাকচ করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বুধবার অর্থবিভাগ এতে সম্মতি দিয়েছে। অর্থবিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কভিশিল্ড’ ভ্যাকসিনের প্রথম চালান দেশে পৌঁছানোর পর গত ২৭ জানুয়ারি ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে ও তথ্য জানাতে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে সরকার। সূত্র জানায়, এর সপ্তাহ দুয়েক আগে অনুমোদন পাওয়া বরাদ্দপত্রে অর্থবিভাগ বলেছে, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাকসিন ক্রয়ের পরিবহন খরচসহ কোল্ড চেইনে পৌঁছানোর জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুকূলে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্থবিভাগের বাজেটে ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তহবিল’ থেকে এ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হবে- তাও বলে দেওয়া হয়েছে। ওষুধ ও প্রতিষেধক ক্রয়ে বরাদ্দ ৬২৮ কোটি ৪৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, পণ্যের ভাড়া ও পরিবহন ব্যয় বাবদ ৭২ কোটি ৭২ লাখ ২৮ হাজার, প্রশিক্ষণে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার, ভ্রমণ-ব্যয়ে ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার, চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়ে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার, স্বাস্থ্য বিধান সামগ্রী বাবদ ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার এবং প্রকৌশলী ও অন্য সরঞ্জামাদি বাবদ ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা। 

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চাহিদা অনুযায়ী আপ্যায়ন ব্যয়ে ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও হায়ারিং চার্জ, প্রচার ও বিজ্ঞাপন, ব্যবস্থাপনা, মুদ্রণ ও বাঁধাই, জরিপ, সম্মানী বা পারিতোষিক, চিকিৎসা ও ডাটাবেজ ব্যয় বাবদ আরও প্রায় ১৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু সে সময় এই বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। টিকা প্রয়োগ শুরুর পর তাতে অনুমোদন দিল অর্থবিভাগ।

ইতিমধ্যে টিকা আমদানির দরপ্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয় ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বরাদ্দপত্রে শর্তজুড়ে দেওয়া হয়েছে। তা হলো- অগ্রিম অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থের ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হবে, অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে দি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং দি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ প্রযোজ্য আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। এ অর্থ চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট কোডে সমন্বয় করতে হবে। এ ছাড়া ভ্যাকসিন ক্রয় ও কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট, এডি সিরিঞ্জ, সেইফটি বক্স ক্রয় ইত্যাদির প্রতিবেদন অর্থবিভাগে পাঠাতে হবে।

এ ভ্যাকসিনের জন্য প্রথম দফায় গত ১৬ নভেম্বর ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড় করে অর্থবিভাগ। যার মধ্য থেকে ইতিমধ্যে ৬ কোটি ডলার সেরাম ইনস্টিটিউটকে পরিশোধ করা হয়েছে। ভ্যাকসিন আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছে জনতা ব্যাংক। এ ঋণপত্রের মাধ্যমে সেরাম ইনস্টিটিউটকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির পরিশোধ করা অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ৫০৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা)। এদিকে ভারত সরকারের পাঠানো উপহারস্বরূপ ২০ লাখ ডোজ টিকা আসার পর আরও ৫০ লাখ ডোজ টিকা দেশে আসার পথে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর