শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

মাটির ঘরের গ্রাম

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

মাটির ঘরের গ্রাম

গ্রামবাংলার নকশা আর রঙের আলপনায় ঐতিহ্য বহনকারী মাটির ঘরের গ্রাম ‘ধানজুড়ি’। দিনাজপুরের বিরামপুরের খানপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল অধ্যুষিত ধানজুড়ি এই গ্রাম। এই গ্রামের শতাধিক বসতঘরের অধিকাংশই নকশা আর রঙের ঐতিহ্যে মাটির বাড়ি। পুরো গ্রামটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম ও সুন্দর করে সাজানো এবং প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আলপনা দিয়ে অঙ্কিত। অনেক পর্যটক এদিকে এলে এই সাজানো গ্রামটি দেখতে ভিড় করেন। সাঁওতালদের সম্ভাবনাময় ধানজুড়ি গ্রামটিকে যদি একটু সুন্দর করে বিভিন্ন ধরনের ফুল ও ফলের গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে তোলা যায় তাহলে এটিও হতে পারে পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান এমনটিই বলছেন স্থানীয়রা। গ্রামটিতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ধানজুড়ি মিশন ও কুষ্ঠ হাসপাতাল। এ কারণে এ অঞ্চলের দূর-দূরান্ত থেকে অনেক রোগীই আসেন সেবা নিতে। দেশের অনেক স্থানের মানুষসহ অনেক বিদেশিও ভিড় জমান এখানে। এখানে যে কেউ এলে এই মাটির বাড়িগুলো দেখতে ভোলেন না। ধানজুড়ি গ্রামের কেরোবিন হেমব্রমসহ অনেকেই বলেন, ধানজুড়ি গ্রামের সব বাড়িই মাটি দিয়ে তৈরি। আমাদের জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এ মাটির বাড়ি নির্মাণ করে আসছি এবং এখনো মাটির বাড়িতে থাকছি। এ ছাড়া মাটির ঘরের তালার ওপরে বর্ষাকালে ধান রাখা যায়, এই মাটির বাড়িগুলোতে তেমন আর্দ্রতাও থাকে না, আর মাটির বাড়ি তৈরিতে খরচও কম হয়। তাদের অনেকে বলেন, আমাদের মা-বোনেরা ছোটকাল থেকেই মাটির বাড়ির কাজ শিখে, প্রতিটি মাটির বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের আলপনা তৈরি করে আরও সুন্দর করে তোলেন। দেয়াল থেকে শুরু করে, জানালা, দরজা, তালাতে সবজায়গায় সুন্দর আলপনা আঁকেন। বছরে দুবার রং ও আলপনায় সাজানো হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন উৎসবের আগেও বাড়িগুলোকে সাজিয়ে তোলা হয়। স্থানীয় বাসন্তী রানী বলেন, বর্তমান সময়ে আমরা ইটের বাড়ি না করে আদিকালের সেই মাটির বাড়ি তৈরি করেছি। এর কারণ মাটির বাড়িগুলো সহজেই লেপ দিয় সুন্দর করে তোলা যায়, যেভাবেই আমরা সাজাতে চাই সেভাবেই আমরা সাজাতে পারি। সেজন্য আমরা ঐতিহ্য হিসেবে মাটির বাড়ি এখনো ধরে রেখেছি। এ ছাড়াও ইটের বাড়িগুলোর তুলনায় মাটির বাড়িগুলো তেমন গরম হয় না, গরমেও অনেকটা ইয়ারকন্ডিশনের মতো ভাব থাকে। এ কারণে ইটের বাড়ির চেয়ে মাটির বাড়িতে বেশি আরাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর