বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনায় নতুন আড়াই কোটি দরিদ্র : জরিপ

ঋণের বোঝা দ্বিগুণ : হোসেন জিল্লুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা মহামারী সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি উলট-পালট করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। করোনা মহামারীর আগে প্রতি বছর যেখানে ১ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হতো সেখানে করোনার কারণে এখন বছরে ৪ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে। যার ফলে করোনাকালে নতুন করে আড়াই কোটি মানুষ চরম দরিদ্রের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। আবার অর্থনীতি রিকভারি, করোনা মোকাবিলা ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি নতুন করে এক দরিদ্রের ফাঁদে আটকে পড়ছে বলে তিনি মনে করেন। ফলে জীবনযাপনের জন্য মানুষ অনেক বেশি ধারকর্জ করছে। এতে গরিব মানুষের ঋণের বোঝা এক বছরে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এ অবস্থা মোকাবিলার জন্য জীবন ও জীবিকাকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। দেশে বিদ্যমান দারিদ্র্য-সংকট নিয়ে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সঙ্গে যৌথভাবে ব্র্যাকের সহযোগী সংস্থা বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন গতকাল অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ ফলাফল তুলে ধরেন। ‘পিপিআরসি-বিআইজিডি দ্রুত প্রতিক্রিয়া গবেষণা পর্ব তৃতীয় ধাপ : দারিদ্র্য ডায়নামিক্স এবং গৃহস্থালি বাস্তবতা’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় অনুষ্ঠানে।

প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, করোনার প্রথম ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিলে ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমেছিল। এখনো তা অব্যাহত। এর জন্য আর্থিক সহায়তার মতো টোকেন কর্মসূচি না নিয়ে বিশদ সহায়তা কর্মসূচি নেওয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দরিদ্র মানুষের ঋণের বোঝা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শহরকেন্দ্রিক নতুন দরিদ্ররা অবস্থা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। করোনা মহামারী সংক্রমণের ইতিমধ্যে এক বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু ঋণের জালে জড়িয়ে এবং সঞ্চয় হারিয়ে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী এখনো তাদের দৈনন্দিন জীবন চালাতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। বিশেষ করে শহুরে বস্তিবাসীদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার-পিপিআরসি এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-বিআইজিডির করা যৌথ গবেষণার তৃতীয় ধাপের এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। টেলিফোনের মাধ্যমে দেশব্যাপী তিন ধাপে করা এ জরিপে কভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট দারিদ্র্যের গতিপ্রকৃতি এবং স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে এর প্রভাব সম্পর্কে তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, শহুরে বস্তিতে কভিড-পূর্ব অবস্থার আয়ের চেয়ে এখনকার আয় ১৪ শতাংশ কম।

করোনায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এর মাঝে আছে হতদরিদ্র এবং মাঝারি দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। এদের অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে। এ ছাড়া রয়েছে দরিদ্র নয় কিন্তু ঝুঁকিতে থাকা একশ্রেণির মানুষ যাদের বলা হচ্ছে ভালনারেবল নন পুওর বা ভিএনপি। দেখা গেছে, দারিদ্র্যসীমার ওপরে কিন্তু মধ্যম জাতীয় আয়সীমার নিচে থাকা এ শ্রেণির মানুষের অবস্থা পরিবর্তিত হচ্ছে সবচেয়ে ধীরগতিতে। গত জুনে দরিদ্র নয় কিন্তু সেই ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ৭২ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিল। তাদের আখ্যায়িত করা হয়েছিল ‘নতুন দরিদ্র’ হিসেবে। সেই নতুন দরিদ্রের ৫০ শতাংশ এখনো ঝুঁকিতে থাকা মানুষের তালিকায় বিদ্যমান। এ হার শহরে ৫৯ আর গ্রামাঞ্চলে ৪৪ শতাংশ।

ড. ইমরান মতিন তাঁর বক্তব্যে নারীদের কর্মহীনতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ কম। আর কভিড-সৃষ্ট এ অবস্থা নারীদের শ্রমবাজার থেকে আরও ছিটকে ফেলতে পারে।

সর্বশেষ খবর