বৃহস্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

বাস্তবায়ন হয়নি ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল

অনুমোদনের পর বাতিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নীতিমালা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনা মহামারীতে দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতকে দ্রুত প্রণোদনা সুবিধা দিতে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের নীতিমালা করার পর শোনা যাচ্ছে, ওই তহবিলের কোনো কার্যক্রমই শুরু হয়নি। এক পয়সাও বিতরণ হয়নি নীতিমালা মেনে। কারণ মন্ত্রিপরিষদ ওই তহবিলের কার্যক্রম বাতিল করেছে। এখন ২য় দফায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর, বিপর্যস্ত ক্ষুদ্র শিল্পকে বাঁচাতে সেই তহবিল পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা চলছে সরকারের মধ্যে। জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ ব্যাপারে যে নীতিমালা তৈরি করে, গত ১ ফেব্রুয়ারি তা অনুমোদন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সে অনুযায়ী সিএমএসএমই ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল বিতরণের প্রজ্ঞাপন জারি করতে পরদিন ২ ফেব্রুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে চিঠি পাঠায়। এরপর ওই তহবিলের আর কোনো হদিস মিলেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো. নাসের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভায় ওই তহবিল বাস্তবায়নে করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নীতিমালাটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে সিএমএসএমই খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা সুবিধা কার্যকর হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে বৃহৎ শিল্পের পাশাপাশি অতিক্ষুদ্র, কুটির শিল্পকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করে এই খাতের (সিএমএসএমই) জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা সুবিধা দেওয়া হয়। দেশের ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো যাতে আবার চালু হতে পারে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, সে কারণে সরকারি-বেসরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব নিয়েছিল, তারা ভাগাভাগি করে ঘোষিত প্রণোদনার অর্থ ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে বিতরণ করবে। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে মূল্যায়নে দেখা যায়, অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ বিতরণ হলেও এই খাতে বিতরণ ছিল লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১১ শতাংশ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে নীতিমালাটি সহজ করে বঞ্চিত এই ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের হাতে দ্রুত ঋণ পৌঁছানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ বিভাগের মতামত নিয়ে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল প্রদানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই তহবিল গঠন করেনি।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য যে প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা হয়েছিল, সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ক্ষুদ্র শিল্পের কোনো জামানত না থাকায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসব খাতে ঋণ বিতরণে আগ্রহী হয়নি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠিয়ে ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য প্রণোদনার ঋণ সুবিধা সহজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই চিঠির পর কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে একত্রিত করে ‘নভেল করোনাভাইরাস প্রভাব  মোকাবিলায় কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ প্রদান’  নামে একটি নীতিমালা করা হয়েছিল। নীতিমালায় বলা হয়েছিল, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ছাড়াও যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বিসিকসহ বিভিন্ন সরকারি অথবা বেসরকারি সংস্থা  থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া উদ্যোক্তারা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত এই প্যাকেজের ঋণ পাবেন। বিদেশ থেকে  দেশে ফেরা এবং শহর থেকে গ্রামে ফেরা নতুন উদ্যোক্তাদেরও দেওয়া হবে ঋণ। সুদের হার হবে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যার মধ্যে গ্রাহক পাবে ৪ শতাংশ সুদে। অনুমোদিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ১০ হাজার  কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন (ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি) করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদার ভিত্তিতে তাদের সুদ ভর্তুকির অর্থ দেবে অর্থ বিভাগ। সরকারিভাবে একটি নীতিমালা অনুমোদনের পর কেন প্রণোদনা তহবিল গঠন করে ঋণ প্রদান হয়নি, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে করোনা মহামারী পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ ছিল না। এ ছাড়া তখন এ ধরনের একটি তহবিল ছাড়ার আগে মূল্যস্ফীতির বিষয়টিও চিন্তায় ছিল। কিন্তু প্রণোদনা তহবিলের নীতিমালা বাতিলের পরপরই ২য় দফায় করোনা পরিস্থিতির আরও বেশি অবনতি ঘটেছে। লকডাউনের কারণে দেশের কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পের পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হয়েছে। ফলে ঘোষিত প্রণোদনা তহবিলটি নতুন করে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগ মিলে এটি করবে। খুব দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান তিনি। এখন এই ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল কে দেবে?-এমন প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জানান, আমরা মনিটারি পলিসি থেকেই এই তহবিল করব। বাংলাদেশ ব্যাংকই অর্থ দেবে। বাজেট থেকে অর্থ নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির ভয় নেই। বরং করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খাত ও মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছানো দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর