রবিবার, ২৩ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকা ফেরা যাত্রীদের সড়ক ও ফেরিঘাটে ভোগান্তি

উত্তরে চলছে দূরপাল্লার বাস

প্রতিদিন ডেস্ক

ঢাকা ফেরা যাত্রীদের সড়ক ও ফেরিঘাটে ভোগান্তি

এখনো চলছে ঢাকায় ফেরার পালা। সপ্তাহ ধরে চলা এ পালার সঙ্গে যোগ হয়েছে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকার ভোগান্তি। ফলে যাত্রীরা নির্ভর করছেন ফেরির ওপর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীর ভিড়ে ফেরিতে তিল ধারণের জায়গা থাকছে না। স্থান-সংকুলান না হওয়ায় ফেরিঘাটে এবং যানবাহনের কমতি থাকার কারণে সড়কে ভোগান্তি বেড়েছে। সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গের অভিযোগ থাকলেও দেশের উত্তরে দূরপাল্লার বাসগুলো সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে চলাচল করছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মাদারীপুর : লঞ্চ ও স্পিডবোট চালু না থাকায় গতকালও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন যাত্রীরা। সকাল  থেকে ফেরিতে করে শিমুলিয়া থেকে যাত্রীরা বাংলাবাজার ঘাটে এসেছেন, আবার বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে গেছেন। ঘাটে শুধু ফেরি চলাচল করায় যাত্রীর চাপ বেশি হয়। বাংলাবাজার ঘাটের ম্যানেজার সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, লঞ্চ ও স্পীডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিতে যাত্রীদের পার করছি। নৌরুটে ১৬ ফেরি চলছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, বাস চালু না থাকায় দুর দুরান্ত থেকে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যাত্রীরা ঘাটে এসেছেন।

রাজবাড়ী : উল্টো অবস্থা রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে। যাত্রী ও যানবাহনে চাপ নেই। ঈদ শেষে কয়েকদিন এই ফেরিঘাটে যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছিল। গতকাল এ ফেরিঘাটে যাত্রী ও যানবাহন চলাচল ছিলো একেবারেই স্বাভাবিক। সরেজমিন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক হয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসেন যাত্রী ও যানবাহনের  চালকরা। সেখান থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের ৩টি সচল ঘাট ব্যবহার করে পদ্মা পাড়ি দেন তারা। যাত্রীরা বলেন, ঈদুল ফিতরের যে চাপ সেটি এখন আর নেই। তবে গুটিকয় মানুষ ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জরুরি কাজের জন্য যাত্রীরা ঢাকায় যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসির) উপ-মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ শেখ বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ১৬টি ফেরি রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তবে লকডাউনের কারণে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

কুমিল্লা : ঈদের ছুটিতে গ্রামে আসা লোকজন কর্মস্থলে যোগ দিতে এখনো ঢাকায় ফিরছেন। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তারা গাদাগাদি করে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে পিকআপ ভ্যানে করে ঢাকায় যাচ্ছেন। গতকাল সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার, ক্যান্টনমেন্ট, চান্দিনা, গৌরীপুর, আমিরাবাদ, শহীদনগর, হাসানপুর ও মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম, চান্দিনা উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ এলাকার তালেব হোসেন বলেন, দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ৪০০ টাকা ভাড়ায় পিকআপ ভ্যানে গাদাগাদি করে যাত্রীদের ঢাকায় যেতে হচ্ছে। পিকআপ ভ্যানের চালক সুমন আহমেদ বলেন, মহাসড়কে ঢাকাগামী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিতে হয়, না হলে আরও বেশি লাভবান হতে পারতাম। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের উপ-পরিদর্শক আলীমুল আজাদী বলেন, মহাসড়কে ঢাকাগামী যাত্রীদের কিছু চাপ রয়েছে। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ : সরকার ঘোষিত লকডাউন অমান্য করে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে চলছে দূরপাল্লার বাস। পুলিশ বলছে, রাতে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বা যানজট এড়াতে দু-একটি বাস চলতে পারে। তবে অধিকাংশ বাসই বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম গোলচত্বর থেকে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের মতে, শুধু পুলিশ নয়, বাস মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীরা সচেতন না হলে সবকিছু পুলিশের রোধ করা সম্ভব হয় না। সরেজমিন মহাসড়কে দেখা গেছে, পুলিশের তল্লাশি থাকলেও ভোরের দিকে বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার কিছু বাস সেতু পার হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দিনভর ঢাকা-রংপুর তারাগঞ্জ লেখা থ্রিস্টার পরিবহন, ঢাকা-বগুড়া লেখা রাকিব পরিবহন, সিরাজগঞ্জ-ঢাকা অভি, সিরাজগঞ্জ-ঢাকা এসআই, ঢাকা-রংপুর লেখা শ্যামলী পরিবহন, ঢাকা-নওগাঁ লেখা অন্তর পরিবহন, ঢাকা-কুষ্টিয়া লেখা লালন পরিবহন, শিউলি পরিবহন, জেআর রাফাত পরিবহন, আল-ইমরান পরিবহন, সুরমা পরিবহন ও আজাদ পরিবহনসহ অনেক দূরপাল্লার বাস মহাসড়কটিতে চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোতে যাত্রী না থাকলেও ঢাকামুখী বাসগুলোতে যাত্রী ছিল ভরপুর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেতুতে দায়িত্বরতরা জানান, দিনের বেলায় কমসংখ্যক বাস চলাচল করলেও রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে এবং ভোরের দিকে একটু বেশি বাস সেতু পার হয়ে যায়।

মহাসড়কের পাশে স্থানীয় দোকানদাররা জানান, বাসগুলো যখন উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে নানা-বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সেতুর পশ্চিম পাশে আসে তখন পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ বাসগুলোকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আর যাত্রীরা বলছেন, বাসগুলো সরাসরি ঢাকায় যাচ্ছে না। সেতু পার হয়ে গাজীপুর চন্দ্রা পর্যন্ত যাচ্ছে। এরপর বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ঢাকায় যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেন ও হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে মহাসড়কে অবাধে দূরপাল্লার বাস চলাচলের কোনো সুযোগ নেই। তবে রাতে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা দূরপাল্লার বাসগুলো সেতুর পশ্চিম পাড়ে আটকে দিলে যানজটের সৃষ্টি হয়। যে কারণে দু-একটি বাস ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু মানুষ বুঝে হোক বা না বুঝে হোক ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, ভাড়ায়চালিত মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছেন। তিনি জানান, প্রতিদিন অসংখ্য বাস ফেরত পাঠানো হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে। আজকেও (গতকাল) অন্তত ১৫টি বাস আটকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মতে, বিভিন্ন জেলা থেকে যদি বাস না ছাড়ত তবে এ সমস্যা হতো না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সচেতনতা। যদি বাস মালিক-শ্রমিক বা যাত্রীরা নিজেরা সচেতন না হয় বা পুলিকে সহায়তা না করে তবে পুলিশের একার পক্ষে সব সম্ভব হয়ে ওঠে না।  

পিরোজপুর : বরগুনার পাথরঘাটা ও আমুয়া এলাকা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ৪টি বাস আটকের পর জরিমানা করে তা ফিরিয়ে দিয়েছে পিরোজপুরের প্রশাসন। গতকাল দুপুরে শহরের পিরোজপুর-নাজিরপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব শিকারপুর এলাকায় প্রায় ২০০ যাত্রীসহ ৪টি বাস আটক করা হয়। পরে ঢাকাগামী বাসগুলোকে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে যাত্রীসহ পুনরায় যেখান থেকে রওনা দিয়ে এসেছে সেখানে ফেরত পাঠানো হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিকুল আলম জানান, সরকার ঘোষিত চলাচলের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ৪টি বাস পিরোজপুরের ওপর দিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল এবং তা আটক করা হয়।

সর্বশেষ খবর