আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির কিছু নেতা সংগঠনের অভ্যন্তরে হাইব্রিডদের পুনর্বাসন করছেন! এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির রাজশাহীর বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। তারা বলেছেন, এই আশ্রয়-প্রশ্রয়ের মাধ্যমে দলটির মধ্যে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সরাসরি পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এতে মহানগর বিএনপিতে এখন ‘হাইব্রিডের বাম্পার ফলন’ হচ্ছে। গতকাল সকালে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন তারা। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোয়ালিয়া থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইদুর রহমান পিন্টু। এ সময় নগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সুইটসহ অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। অবশ্য, নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ সাইদুর রহমান পিন্টু বলেন, ‘বিএনপির ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পকেট কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যেসব আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীর হাতে অতীতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তাদেরকেই এখন নগর বিএনপির কিছু নেতা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছেন।’
তিনি আরও বলেন, রাজপাড়া থানা বিএনপির বর্তমান সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীন আহমেদ, মাহমুদুল হক রুবেল, হারুনুর রশিদ (সাবেক জাসদ নেতা), আবদুর রাজ্জাক (সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা) এবং কমিটির সদস্য বদরুদ্দোজা বদর বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য দলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাদের বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এ ছাড়া সিটি নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে প্রচারণা, ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা, র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার মতো ঘটনাও উল্লেখ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, নওহাটার সালাহউদ্দিন মিন্টুর বাড়িতে গুলিবর্ষণ করে তার বাবাকে হত্যা, নিউমার্কেট এলাকায় রিয়াজকে কুপিয়ে হত্যা এবং কাদিরগঞ্জে রিকশাচালক গোলাম হোসেনকে খুনের ঘটনার অভিযুক্তদের মধ্যে বেশির ভাগই অতীতে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও তাঁতী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তারা নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আছেন বলে দাবি করা হয়। রাজশাহী সড়ক পরিবহন সমিতি দখলের অভিযোগও তোলা হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, নজরুল হুদা, মামুনুর রশিদ মামুন ও মনিরুজ্জামান শরীফের নেতৃত্বে ৯ আগস্ট এ সমিতি দখল করা হয়। নজরুল ইসলাম হেলালকে অবৈধভাবে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেওয়া হয়। মামুন আগে পেশিশক্তির মাধ্যমে বাস মালিক সমিতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এ ছাড়া, নজরুল হুদার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ কাউন্সিল অফিসের জায়গা দখলের অভিযোগ তুলে বলা হয়, আদালতের স্থিতাবস্থার নির্দেশনা থাকার পরও সেখানে থাকা ভবন দেওয়া হয়েছে। সাইদুর রহমান আরও বলেন, নগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিপুল অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের সময়কার হামলা ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের রক্ষা করতে বিভিন্ন মহলে তদবির করছেন। আবার মামলার ভয় দেখিয়ে নিরপরাধ ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিদের কাছ থেকেও টাকা আদায় করা হচ্ছে। সংগঠনের ওয়ার্ড কমিটি গঠনে অনিয়ম ও লেনদেনের অভিযোগ উঠে আসে। বলা হয়, রাজপাড়া থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী ও মাহমুদুল হক রুবেল অভিযোগ করেন, তাদের না জানিয়ে কমিটিতে রাখা হয়েছে এবং তারা কোনো রাজনীতিতে যুক্ত নন- এজন্য তারা পদত্যাগ করেন। এখানে এক যুবলীগ নেতাকে পদ দেওয়া হয়। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা আবদুল মমিনকে তার সিটি নির্বাচনে তাকে সহযোগিতা করাসহ ফুলের মালা দিয়ে বরণ করার কথাও অভিযোগ তুলে ধরা হয় নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনের বিরুদ্ধে।
নগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করব, নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে দল, দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করুন। এটাই আমার বক্তব্য।’ আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈসা বলেন, ‘সাবেক যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট ৫ আগস্টের পর মাউশির এক কর্মকর্তাকে চেয়ার থেকে টেনে বের করে দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করলেও তিনি এখন যা খুশি করছেন-এখনকার বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন তারই অংশ।