সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে টানা ২৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেলেন আয়শা সিদ্দিকা ঝড়া (৩০) নামের এক নারী। ৪ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঝড়ার মা কুষ্টিয়া মডেল থানায় ছাত্রদল নেতা রাশেদসহ চার-পাঁচ জনের নামে মামলা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন।
ঝড়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিষ্ণুদিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিপি খাতুন তার বিধবা মেয়ে ঝড়াকে নিয়ে হাউজিং ডি ব্লক ৪৫৬ নম্বর বাসায় ভাড়া থাকতেন। লিপি খাতুন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদের কাছে দেড় লাখ টাকা পেতেন। দীর্ঘদিন টাকা ফেরত চাইলেও রাশেদ নানা টালবাহানা করতে থাকেন। ১১ জুন সন্ধ্যায় রাশেদ পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে লিপি খাতুন ও ঝড়াকে শহরের পুলিশ লাইনস এলাকার পুনাক ফুড পার্কে আসতে বলেন। লিপি খাতুন পুনাক ফুড পার্কে গিয়ে দেখেন সেখানে ছাত্রদল নেতা রাশেদের সঙ্গে যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজু, আনিসুর রহমান বিকাশ, বিপুল আহমেদ, জাকির হোসেনসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। তিনি পাওনা টাকা ফেরত চাইলে রাশেদ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় রাশেদের সঙ্গে ঝড়ার কথাকাটাকাটি হয়। টাকা না পেয়ে একপর্যায়ে বাসায় ফিরে আসার সময় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ঝড়া।
লিপি খাতুনের অভিযোগ, রাশেদসহ যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল তারাই এ হামলা চালিয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, ১১ জুন রাত আনুমানিক ১১টার দিকে ঝড়াকে কয়েকজন মিলে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার দুই পায়ের লিগামেন্টসহ রক্তনালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে নিয়ে ভর্তি করা হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে তিনি ডা. নাজিম উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সে অবস্থায় ৪ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঝড়ার মৃত্যু হয়।
ঝড়ার চাচা আবদুর রশিদ জানান, ঘটনার পর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। হামলার ঘটনায় ঝড়ার মা লিপি খাতুন ২১ জুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় ছাত্রদল নেতা রাশেদসহ চার-পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক তাপস কুমার পাল বলেন, ‘তদন্ত শুরু করেছি। কিছু প্রাসঙ্গিক আলামতসহ ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা চলছে। আশা করি শিগগিরই জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’ কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম জানান, গভীর রাতে শহরের হাউজিং এলাকায় নারীর ওপর হামলা ও গুরুতর জখমের অভিযোগে করা মামলাটির তদন্ত চলছে। যারাই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।