রবিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি

সাইফুল ইসলাম বেগ, বিশ্বনাথ (সিলেট)

নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি

বাড়ি ভর্তি গাছগাছালি। আছে বাঁশ-ঝোপঝাড়। গাছের শাখা-প্রশাখায় হরেক রকম পাখিদের বিচরণ। চারদিকে শুধু পাখি আর পাখি। নিজেদের মতো করেই গাছে গাছে সংসার পেতেছে এরা। পরম মমতায় ছানাদের মুখে খাদ্য পুরে দেয় মা পাখি। আবার ঝাঁক বেঁধে অনেকে ঘোরে, খেলে আপন মনে। দিনভর পাখিদের ব্যস্ত ছোটাছুটি আর কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত বাড়ি। এ যেন পাখিদের আপন আলয়। চিত্রটি সিলেট সদর উপজেলার খাদিম নগর ইউনিয়নের ছালিয়া গ্রামের ‘নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি’র। এখানে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা পাখিপ্রেমীদের কাছেও পরিচিত স্থান এটি। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়ক লাগোয়া ছালিয়া গ্রামের ‘নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি’র অবস্থান। সড়কে থামলেই চোখে পড়ে পাখিদের মিলনমেলা। শোনা যায় হরেক রকম পাখির ডাক। তখন সন্ধ্যা নামছিল। খাবার আহরণ শেষে, আশপাশের হাওর-জলাশয় থেকে নীড়ে ফিরছিল পাখিদের ঝাঁক। সবচেয়ে বেশি সাদা বক আর  পানকৌড়ি। আছে বাবুই, বাদুড়, তিতির ও কবুতর। বাড়ির সবকটি গাছেই পাখিদের নিরাপদ আবাসন। মূল ফটক অতিক্রম করেই চোখে পড়ে চিত্রা হরিণের পাল। এর একটু পরেই বসতঘর। বাম দিকে আছে খাঁচাবন্দী বানর ও উন্মুক্ত ঘোড়া। এ সময় পাখি দেখতে বাড়িতে প্রবেশ করেন পর্যটকরা। গণমাধ্যমকর্মী আব্বাস হোসেন ইমরান বলেন, নূরুদ্দিনের পাখিবাড়ি যেন এক পাখিরাজ্য। চেনা-অচেনা হাজারো পাখির বাস সেখানে। ওই সব পাখিদের কলতানে মুখরিত নূরুদ্দিনের বাড়িতে গেলে পাখিপ্রেমীসহ যে কারও মন প্রশান্তি পাবে।

বাড়ির মালিক এমদাদুল হক জানান, তার মরহুম পিতা হাজী নূরুদ্দিন ছিলেন পাখিপ্রেমী। ‘খাঁচায় নয়, পাখির বিচরণ মুক্ত আকাশে’-এটি তিনি বলতেন প্রায়ই। স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা, পানকৌড়ি ও বকসহ বিভিন্ন জাতের পাখি খরিদ করতেন তিনি। বাড়ি এনে মুক্ত করে দিতেন আকাশে। প্রায় ২০ বছর পূর্বে তিনি শুরু করেন এ কাজ। ঘুরে ফিরে কিছু পাখি আবার ফিরে অসত নূরুদ্দিনের বাড়ি। বাসা বেঁধে ছানা তুলত। শীতকালে আশ্রয় নিত অতিথি পাখিও। এভাবেই ধীরে ধীরে বংশবৃদ্ধি হয়ে নূরুদ্দিনের ২ একর ৪০ শতকের বাড়িটি পাখিরাজ্যে পরিণত হয়। শুরুতে পাখিদের খাবার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন নিজেই। ২০০৪ সালে নূরুদ্দিনের মৃত্যুর পর, তাঁর রেখে যাওয়া শখের পাখিদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন এমদাদুল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর