বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে প্রতারক চক্রের ১৭ সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সুইসড্রাম ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক কাজী আল-আমিনসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন এলাকার সুইসড্রাম কোম্পানিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর, দুটি সিল, দুটি ব্যানার, চারটি ডায়েরি ও খাতা, একটি রেজিস্ট্রার, কোম্পানির ১২৫টি লিফলেট, প্রতারণায় ব্যবহৃত সুইসড্রাম কোম্পানির ভুয়া ওষুধ ও প্রসাধন সামগ্রী, সুইসড্রাম কোম্পানির ২৫ সেট ডিস্ট্রিবিউটর ওয়ার্কিং ফাইল, ২৩টি মোবাইল ফোন ও ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৫ টাকা জব্দ করা হয়।

র‌্যাব বলছে, চক্রটি এস-ফ্যাক্টর নামে একটি ওষুধ (সর্বরোগের মহৌষধ), যা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ওষুধ বলে প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। এমনকি এই ওষুধ করোনা প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে বলেও তারা প্রচার করত। প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা ঘন ঘন তাদের অফিস পরিবর্তন   করত। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- সুইসড্রাম কোম্পানির পরিচালক কাজী আল-আমিন, মো. সালাউদ্দিন, শেখ মো. আবদুল্লাহ, মনিরা ইয়াসমিন, মো. জাহিদ হাসান, মো. স্বপন মিয়া, মো. শাহজাহান, মো. মিজানুর রহমান, মো. বাদশা ওরফে সুলাইমান, ইমাম হোসাইন, মো. আবদুর রাজ্জাক ওরফে আনারুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মো. ফারুক উদ্দিন, আঞ্জুমান আরা বেগম, শেখ রবিন, ইমাম হোসাইন ও মোছা. আছমা বেগম। এই চক্রের প্রতারণার বিস্তারিত তুলে ধরে গতকাল র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক জানান, প্রতারক চক্রটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও রাজধানীর নানা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জৌলসপূর্ণ ও আকর্ষণীয় রেস্টুরেন্টে ভিকটিমদের নিয়ে সভা, সেমিনার, মোটিভেশনাল ওয়ার্কশপ, আকর্ষণীয় লাঞ্চ ও ডিনার পার্টির আয়োজন করত। অসহায়, নিরীহ, অর্ধশিক্ষিত, এমনকি শিক্ষিত শ্রেণির ভিকটিমরা এ ধরনের জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে প্রলুব্ধ হয়ে খুব সহজেই তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিতেন। এরপর নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে চক্রটি বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করত। প্রতারক চক্রের প্রতিটি সদস্য প্রতারণাকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের একটি সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। এই প্রতারক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী ও সদস্য রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেকার ও অসচ্ছল যুবক-যুবতী, এমনকি শিক্ষিত লোকজনকে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার ও সাধারণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করত। নিয়মিত গমনাগমনকারী ও কথাবার্তায় পটু, আর্থিকভাবে মোটামুটি সচ্ছলদের সদস্য সংগ্রহের জন্য চাপ দিত তারা। তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে বাধ্য করে এবং নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে। চক্রের হোতা সুইসড্রাম কোম্পানির পরিচালক কাজী আল-আমিন দামি ব্র‌্যান্ডের গাড়ি নিয়ে কোম্পানির নতুন সদস্যদের কাছে নিজেকে প্রবাসী, আবার কখনো বিভিন্ন দফতরের পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতেন। তাদের প্রলুব্ধ করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে মনোনয়ন প্রদান করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। ভিকটিমদের প্রলুব্ধ ও তথ্য সংগ্রহ করে ভুলিয়ে নানা কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো। এরপর তাদের প্রতি গ্রাহক অথবা টার্গেট পূরণের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পারসেন্টেজ দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হতো। একই সঙ্গে তাদের অধিক মুনাফা লাভের স্বপ্ন দেখানো হতো।

সর্বশেষ খবর