মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অনিয়মে জড়িত ২৮ ই-কমার্স কোম্পানি

তালিকা দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ই-কমার্স ব্যবসায় নেমে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে পড়া অন্তত ২৮টি কোম্পানির নামের তালিকা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে হস্তান্তর করেছে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব কোম্পানির লেনদেনের হিসাবও হাতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কমিটির সমন্বয়ক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ১৫ সদস্যের ওই কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পৃথক তালিকা পেয়েছে কমিটি। একটি তালিকায় ১৯টি, আরেকটিতে ১৭টি ও অন্যটিতে ১৩টি কোম্পানির নাম রয়েছে। তবে তিনটি তালিকার মধ্যেই আটটি প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে। এগুলো সমন্বয় করে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে দেওয়া হবে। তারা এ তালিকা ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ নেবে।’ এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ই-কমার্স খাতের পুনর্গঠনে সাতটি বিষয়ে মতামত দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে ও উত্তরণের পথ বের করতে সুপারিশ করবে এ কমিটি। ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে এখন যে বিষয়টা হয়েছে তা নিয়ে আমাদের এক মাস সময় দেওয়া হয়েছিল মন্ত্রিপরিষদকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। গত ১৮ তারিখ কমিটির প্রথম বৈঠকে আমাদের সাতটি বিষয়ে নজর দিতে বলা হয়। বিশেষ করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেওয়ার জন্য। আমরা তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তিনটি তালিকা পেয়েছি। এক বাহিনী দিয়েছে ১৯টির নাম, আরেকটি ১৭ ও অপর বাহিনী ১৩টি নামের তালিকা দিয়েছে। আমরা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত  নিয়েছি এগুলো সমন্বয় করে বিএফআইইউতে পাঠানো হবে। তারা এ তালিকা ধরে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের খোঁজ নেবে। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য পাওয়া যাবে। আগামী ৯ তারিখে আরেকটা মিটিং হবে। সেই মিটিংয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক লেনদেনের হিসাব উত্থাপন করা হবে। মিটিংয়ে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই শেষে ১১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করব। অভিযুক্ত যে ১৯ কোম্পানির নাম এসেছে তাদের টাকার পরিমাণ কত- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সে জন্যই তথ্য চাচ্ছি আমাদের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে। ১৯টা না, আরও আছে। বাকি যে ১৭টি আছে তার মধ্যে কমন আছে আটটি। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটা ১৯-এর বেশিই হবে। তাদের তালিকা সিলগালা করে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠিয়ে দেব। কে কতটা অভিযুক্ত- এমন প্রশ্নে বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপক শওকতুল আলম জানান, সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে কিছু দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। সেগুলোর ভিত্তিতে তারা মনিটরিং করে। তারা অন্যরকম লেনদেন দেখলে বিএফআইইউকে রিপোর্ট করে। পরে আমরা আরও তথ্য যাচাই করে সে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিই। এ ছাড়া পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনও গুরুত্বসহকারে মূল্যায়ন করে বিএফআইইউ। কেউ ব্যক্তিগতভাবে অভিযোগ করলে সেটাও আমরা বিবেচনায় নিয়ে থাকি। এদিকে গোয়েন্দাদের তালিকায় কোন কোন ই-কমার্স কোম্পানির নাম রয়েছে তা প্রকাশ করেনি মন্ত্রণালয়। তবে গোয়েন্দা সংস্থার অনুমোদন পেলে এসক্রো সার্ভিসে আটকে থাকা গ্রাহকদের ২১৪ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া শুরু হবে বলে বৈঠক থেকে জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘এটা সিআইডি ফ্রিজ করে রেখেছে। তাদের ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার পরই টাকা বিতরণ শুরু করা যাবে। এখানে হয়তো সার্ভিস চার্জ বাবদ ১ শতাংশ টাকা কাটা হতে পারে। টাকাটা যেহেতু অনলাইনে দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এটা অনলাইনেই ফেরত যাবে।’

বৈঠকে ইউবিআইডি (ইউনিক বিজনেস আইডিন্টিফিকেশন) ও এসক্রো সার্ভিস অটোমেশন নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান কমিটির সমন্বয়ক। তিনি বলেন, এটুআইকে কিছু বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটা হচ্ছে ইউনিক বিজনেস আইডি। একটা কমিটি এটা ফাইনাল করেছে। প্রাথমিক অনুমোদনও পেয়েছে এ মডেলটি। অ্যানালগ ফরমেট থেকে এটুআই এটাকে ডিজিটাল ফরমেটে করে দেবে। খুব দ্রুতই ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করা হবে। যারা ই-কমার্সে বিজনেস করবে, তাদের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কাজটি হবে অনলাইনে। আমরা এ প্রক্রিয়াটিকে খুব সহজ করেছি। যাতে ইউনিক বিজনেস আইডি চালু করতে গিয়ে কোনো ব্যবসা মুখথুবড়ে না পড়ে। এসক্রো সার্ভিস অটোমেশন করার জন্যও এটুআই থেকে সহযোগিতা নেওয়ার কথা জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, এ কাজের জন্য একটি অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর