শনিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গাবুরার কান্না এখনো গ্লাসগোতে শোনা যায়নি

-অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর

গাবুরার কান্না এখনো গ্লাসগোতে শোনা যায়নি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এবং ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ এর  চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছেন, গাবুরার কান্না এখনো গ্লাসগোতে শোনা যায়নি। করোনা মহামারীর কারণে এক বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের ১২০ জন সরকারপ্রধান ইতিমধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। এ পর্যন্ত জমা দেওয়া স্বপ্রণোদিত কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বা এনডিসির মাধ্যমে বিশ্বের তাপমাত্রা এ শতাব্দীর মধ্যে ১.৫ ডিগ্রি  সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখা সম্ভব হবে না। আইইউসিএন এশিয়া আঞ্চলিক মেম্বার্স কমিটির ভাইস-চেয়ারপারসন এবং বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন ড. তিতুমীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ১২ বছর আগে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আইলার তান্ডবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার গাবুরা ইউনিয়ন। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা গাবুরাবাসীর নিত্যসঙ্গী। সাতক্ষীরা ও খুলনায় ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল, ফণী, আম্ফান, ইয়াসের পর পর আঘাতে বহু মানুষের কপোতাক্ষ পাড়ের পৈতৃক ভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। প্রায় প্রতি বছরই বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ের পর লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান এখনো মিলছে না। তিনি বলেন, গাবুরাসহ বিশ্বের জলবায়ু বিপন্ন মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি বলছে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১টি দেশে আগামী দিনে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার ঘটনা বাড়বে। পরিস্থিতি এখন ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। গত ২ হাজার বছরেও বিশ্ববাসী দেখেনি এমন সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার প্রবণতা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার একটি সম্পর্ক আছে। পৃথিবীর কার্বন পরিসর ফুরিয়ে আসছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করে কার্বন বাজেট অনুযায়ী পৃথিবী মাত্র ৪০০ গিগাটন কার্বন নিঃসরণ করতে পারবে। আইপিসিসি ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা বা নেট জিরোর কথা বলেছে। সম্পদ আহরণের প্রতিযোগিতায় উন্মত্ত দেশগুলো বায়ুমন্ডলে বিরাজমান গ্রিন হাউস গ্যাসের আধিক্যের ঐতিহাসিক দায় এড়াতে পারে না। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের অধিকার ন্যায্যতম। কিন্তু কার্বন বাজেটে তাদের পরিসর দাবিয়ে রাখতে ধনী দেশগুলো বিভিন্ন ফন্দিফিকির হাজিরে ব্যস্ত। অধ্যাপক তিতুমীরের মতে, বায়ুমন্ডলে অধিক কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বছরের পর বছর জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যে পরিমাণে কমাতে হবে, বিশ্ব তার চেয়ে ১২০ শতাংশ বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পথে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে চলেছে, যা বিস্ময়কর!

সর্বশেষ খবর