বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ইউপি ভোটে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলনে ভাটা

রফিকুল ইসলাম রনি

ইউপি ভোটে আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলনে ভাটা

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। করোনার মধ্যেও কিছু জেলা-উপজেলা সম্মেলন হয়েছে। তবে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে অনেকটাই স্থগিত রয়েছে তৃণমূল সম্মেলন। হাতেগোনা কয়েক নেতা তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকলেও অনেক নেতাই দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে সরে গেছেন বলে অভিযোগ আছে। দলীয় সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪২ জেলা মেয়াদোত্তীর্ণ। শুধু জেলা নয়, ৬৫০টি সাংগঠনিক উপজেলা-থানা কমিটির দুই তৃতীয়াংশের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। কোথাও কোথাও এক থেকে দেড় যুগ সম্মেলন নেই। কত হাজার ইউনিয়ন-ওয়ার্ড কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ সে পরিসংখ্যান নেই দলের কাছে। সর্বত্র বেহাল অবস্থা। জেলা-উপজেলা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে আওয়ামী লীগ। ফলে দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় ‘ক্ষমতা’ কুক্ষিগত করার সুযোগ পাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। এ কারণে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, করোনা মহামারী ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে সম্মেলন ও কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলন সামনে রেখে তৃণমূল ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শুরু হয়েছিল উপজেলা-জেলা সম্মেলন। তবে হাঁকডাক দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলার সম্মেলন শুরু হলেও নানা জটিলতায় তা আর করা যায়নি। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে মাত্র ২৯টি জেলা সম্মেলন করতে সক্ষম হন নেতারা। জাতীয় সম্মেলনের পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় জেলা-উপজেলা সম্মেলনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামেন কেন্দ্রীয় নেতারা। প্রায় দুই শতাধিক উপজেলা ও ১৩টি সাংগঠনিক জেলার সম্মেলন করা হয়েছে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। গত বছর মার্চে করোনা মহামারী শুরু হলে ভাটা পড়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নেতা-কর্মীদের পুনরায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে নির্দেশ দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক গতি বাড়াতে জেলা-উপজেলা নেতাদের কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠান। করোনা মহামারী কিছুটা কমে এলে ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা সম্মেলন শুরু হয়। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগের ৩৫ উপজেলার সম্মেলন শেষ করা হয়। ঢাকা বিভাগের কয়েকটি উপজেলারও সম্মেলন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করার লক্ষ্য স্থির করেছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তবে এখন ভাটা পড়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের কারণে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, দলের জাতীয় কাউন্সিল ঠিকমতো হলেও নজর নেই জেলা-উপজেলা কিংবা থানা-ইউনিয়নে। আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ জেলা-উপজেলা ও থানা-ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বেশ আগেই। অনেক থানা-উপজেলা কিংবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি সর্বশেষ কবে হয়েছে তাও ভুলতে বসেছেন খোদ ওই কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কেউ কেউ। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা-উপজেলা এবং থানা ও ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ তিন বছর। কিন্তু অনেক জেলায় কমিটির মেয়াদ তিন বছরের জায়গায় চার-পাঁচ বছর কিংবা দেড়যুগ সম্মেলন না হওয়ার নজির রয়েছে। পুরনো কমিটি দিয়ে ঢিমেতালে চলছে দলের কার্যক্রম। ফলে গতিহীন হয়ে পড়ছে তৃণমূল, উঠে আসছে না নতুন নেতৃত্ব। ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলার মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হয়েছে দুই বছর আগে। বাকি জেলার মধ্যে সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলার সম্মেলন করা হয়েছে। অন্যগুলোর মেয়াদ নেই। উপজেলাতেও অনেকটা বেহাল। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা পুরোদমে জেলা-উপজেলার সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম। করোনা থামিয়ে দেয়। এরপর আবার উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাও চলমান ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের কারণে পারছি না। যেসব এলাকায় ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব এলাকায় ওয়ার্ড, থানা সম্মেলন স্থগিত রাখা হয়েছে। যেখানে ইউনিয়ন ভোট নেই, সেখানে কার্যক্রম চলছে।’ সিলেট বিভাগের ৫টি জেলার ৪টিতে গত কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে সম্মেলন হয়। অধিকাংশ উপজেলা মেয়াদোত্তীর্ণ। এ প্রসঙ্গে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলাগুলোর সম্মেলন হয়েছে। উপজেলা যেগুলোর মেয়াদ নেই, সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কারণে সম্মেলন হচ্ছে না। ভোট শেষ হলে নতুন করে তারিখ ঘোষণা করব।  রাজশাহী বিভাগে ৯টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর এই বিভাগে সবচেয়ে বেশি উপজেলায় সম্মেলন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর ৫টি জেলা ও ৩৫টি উপজেলার সম্মেলন করেছি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি উপজেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ইউপি ভোটের কারণে সম্মেলন পিছিয়ে গেছে। পাবনার ভাঙ্গুড়া, বগুড়ার শিবগঞ্জ ও শাহজাহানপুরে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু ইউপি নির্বাচনের কারণে করা সম্ভব হয়নি। তবে ১৭  নভেম্বর নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার সম্মেলন হবে বলে জানান তিনি। 

ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল ও ভালুকার সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। ভোটের পর পুরোদমে সম্মেলন শুরু হবে।

খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলা ও উপজেলার সম্মেলনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর, ১৫ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ এবং আগামী ৮ জানুয়ারি মাগুড়া জেলার সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। একইভাবে ১৮ নভেম্বর মেহেরপুরের মুজিবনগর, ১৯ নভেম্বর মেহেরপুর, ৫ ডিসেম্বর গাংনী  সদর উপজেলা, ২০ নভেম্বর মেহেরপুর পৌরসভা, ২৯ ডিসেম্বর শৈলকুপা, ৩০ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করি যথাসময়েই সম্মেলন হবে।

সর্বশেষ খবর