নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলে চলমান ২৬তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা এখন শেষ পর্যায়ে। গত ১ জানুয়ারি এ মেলা শুরু হয়। এবারই প্রথম স্থায়ী কমপ্লেক্সে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল ছিল মাসব্যাপী মেলার শেষ ছুটির দিন। এ দিন মেলা প্রাঙ্গণে ছিল উপচে পড়া ভিড়। শেষ শুক্রবার হওয়ায় অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল দর্শনার্থীদের এমন ভিড় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। করোনা মহামারির তীব্রতার প্রেক্ষাপটে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই মেলায় হাজির হয়েছিলেন দর্শনার্থীরা। তবে বেশির ভাগ দর্শনার্থী মুখে মাস্ক পরে মেলায় এসেছেন। সকাল থেকেই বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। বেচাকেনা বাড়লেও ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাই ছিল বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যোগাযোগব্যবস্থা এখনো তেমন ভালো না হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা কম, তাই বেচাকেনা আশানুরূপ হচ্ছে না। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকে পণ্য না কিনে ঘুরেফিরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
গতকাল মেলায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, টিকিট কেটে লাইন দিয়ে হাজার হাজার লোক মেলায় প্রবেশ করছে। মেলায় স্থায়ী প্যাভিলিয়নের পাশাপাশি প্যাভিলিয়নের সামনে ও পেছনেও বিভিন্ন স্টল রয়েছে। মেলায় রয়েছে ইলেকট্রনিক্স, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, কসমেটিক্স, বিভিন্ন প্রকার কাপড়, খাদ্যপণ্য, খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন। গৃহস্থালি, কসমেটিক্স, বিভিন্ন প্রকার কাপড়, খাদ্যপণ্য, খাবার হোটেলে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। প্রাণ ফুড প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, শেষ দিকে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। শুরু থেকেই ১০% ছাড় দেওয়ায় প্রচুর ক্রেতা পণ্য ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। সেভয় আইসক্রিমের কর্মকর্তা সোলাইমান বলেন, মেলা উপলক্ষে আইসক্রিম বিক্রি ভালো হলেও তুলনামূলক কম। ব্লেজারের দোকানে ৪৫০০ টাকার ব্লেজার ৩২০০ টাকায়, ২৫০০ টাকার ব্লেজার ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মগবাজার থেকে আসা বিল্লাল নামে এক ক্রেতা বলেন, ফেসবুকে দেখলাম মেলায় কম টাকায় ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে, তাই মনের মতো একটি ব্লেজার কিনলাম। কাপড়ের দোকানগুলোতেও ভিড় ছিল। আনোয়ার জামদানির সেলসম্যান ইব্রাহিম প্রধান বলেন, নতুন জায়গায় প্রথম মেলা হওয়ায় আমরা চিন্তায় ছিলাম, প্রথমে বেচাকেনা কম হলেও এখন ভালো হচ্ছে। কসমেটিক্সের পাশাপাশি ক্রোকারিজ ও গৃহস্থালি পণ্যের দোকানগুলোতেও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন পণ্যে ছাড়ও দিচ্ছেন তারা। নানাদি এক্সপোর্টসের সেলসম্যান মাহমুদ বলেন, শেষ দিকে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। তবে দর্শনার্থী বেশি, ক্রেতা সে তুলনায় কম। মেলায় তুলনামূলকভাবে বেচাকেনা কম বলে অনেক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। ইরানি পণ্য প্যাভিলিয়নের সেলসম্যান ফারুক তালুকদার বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দূরের ক্রেতার সংখ্যা মেলায় কম। আর এ কারণে বেচাকেনা তুলনামূলকভাবে কম। আরএফএল প্যাভিলিয়নের সেলসম্যান মো. ফজল খান বলেন, শেষ দিকে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে ২০% ছাড় দিচ্ছি আমরা। মেলায় অন্যান্য পণ্যের তুলনায় ইলেকট্রনিক্স ও আসবাবপত্রের প্যাভিলিয়নগুলোতে বেচাকেনা কম দেখা গেছে। যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা খারাপ ও চাহিদার তুলনায় প্যাভিলিয়নে জায়গা কম হওয়ায় বেচাকেনা কাক্সিক্ষত হয়নি বলে তারা মনে করছেন। ভিশন ইলেকট্রনিক্সের ম্যানেজার বায়জিদ হোসেন বলেন, প্রথমে বেচাকেনা কম হলেও শেষ দিকে সাড়া পাচ্ছি। হাতিম ফার্নিচারের কর্মকর্তা মো. ফারহান বলেন, প্যাভিলিয়নে জায়গা বরাদ্দ কম পাওয়ায় সব পণ্য ডিসপ্লে করা যায়নি। এ ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ভালো ক্রেতা মেলায় কম এসেছেন। রিগ্যান ফার্নিচারের ইনচার্জ মো. রিপন হোসেন বলেন, তাদের বেচাকেনা খুব ভালো হয়নি। এবারের মেলায় পণ্যের মূল্য গতবারের তুলনায় বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতা পণ্য কিনছেন না বলে মনে করছেন অনেক ব্যবসায়ী। ডিজনি ইটালি স্টলের ম্যানেজার মো. রাজন বলেন, এবারের মেলায় তাদের পণ্য কিনতে ১৫% এর ওপরে লেগেছে। আর তাই অনেকে পণ্য কিনছেন না। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা সাহিবা মাহবুবা বলেন, মেলায় পণ্যের দাম কিছুটা বেশি, ঘুরেফিরে দেখছি। মনমতো হলে কিছু পণ্য কিনব। মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঢাকার বাইরে প্রথম মেলা নিয়ে আমরা প্রথমে কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। ১৫ তারিখের পর বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। বর্তমানে মেলার শেষ দিকে দর্শনার্থী এবং ক্রেতা সবই বেশি হচ্ছে। প্রথম হিসেবে আমরা মনে করি মেলা শতভাগ সফল হয়েছে।