বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সবকিছু স্বাভাবিক, দরকার সতর্কতা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সবকিছু স্বাভাবিক, দরকার সতর্কতা

রাজধানীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দেশে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন কেন্দ্র চলছে পুরোদমে। খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সশরীরে শুরু হয়েছে ক্লাস। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক রেখে উঠেছে বিধিনিষেধ। ধারাবাহিকভাবে কমছে সংক্রমণ হার। গতকাল শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। নিয়ন্ত্রণে আসছে করোনা। স্বাস্থ্যবিধি মানার সতর্কতায় জোর দিয়ে ছন্দে ফিরছে জনজীবন।

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসা আমাদের জন্য স্বস্তির। করোনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিন্তু নির্মূল হয়নি। সর্দি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো থেকে যাবে করোনাও। তাই এই ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, দেশের অর্থনীতি, দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হলে লকডাউন, বিধিনিষেধ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। তাই করোনাকে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। মাস্ক পরা, হাত ধোয়াকে অভ্যাস হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাই সবার প্রতি আহ্বান থাকবে স্বাস্থ্যবিধি মানুন, টিকা নিন, সুস্থ থাকুন।’ কভিড মহামারির মধ্যে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ছয় সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর গতকাল সশরীরে ক্লাসের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। নিয়মিত ক্লাসের মাধ্যমে তারা মহামারির দুই বছরের শিখন ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২২ ফেব্রুয়ারি আবার সীমিত পরিসরে সরাসরি ক্লাস শুরু হলেও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছিল অপেক্ষায়। গতকাল প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর মধ্য দিয়ে সেই অপেক্ষা ঘুচল। এখন থেকে প্রাথমিক স্তরে প্রতিদিনই ক্লাস হবে বলে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, টানা দেড় মাস সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনাভাইরাস অন্যান্য সাধারণ রোগের মতো একটি রোগ হিসেবে গণ্য করা হবে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশে করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে আছে। গতকাল দেশে ২২ হাজার ৭১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭৩২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মারা গেছে আটজন, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৪ হাজার ৮২৪ জন। করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। গত মঙ্গলবার দেশে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯৯ জন। করোনা শনাক্তের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।  দেশে করোনা পরিস্থিতি প্রায় সাড়ে তিন মাস নিয়ন্ত্রণে থাকার পর গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে রোগী বাড়তে শুরু করে। করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার দ্রুত বাড়তে থাকে। ৬ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। এর দুই সপ্তাহের মাথায় ২০ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্ত ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় দৈনিক রোগী শনাক্ত ১৫ হাজারের ওপরে উঠেছিল। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা ১০ হাজারের ওপরে ছিল। এরপর নিয়মিত রোগী শনাক্ত ও শনাক্তের হার কমছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা চলে গেছে ভেবে অবহেলা করার সুযোগ নেই। এই সময়কে ‘নিউ নরমাল লাইফ’ হিসেবে ধরে জীবনযাপন করতে হবে। সশরীরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অবহেলা বিপদ ডেকে আনে। করোনা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে হানা দেয়। মাস্ক যে কোনো ভ্যারিয়েন্টেই সুরক্ষা দিতে হবে। সবাইকে অবশ্যই টিকা নিতে হবে। করোনাকে পরাস্ত করতে এর বিকল্প নেই।’  স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকাতে আমরা ভালো সাড়া পেয়েছি। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের টিকার পাশাপাশি বুস্টার ডোজ পুরোদমে চলছে। বিধিনিষেধ থাকায় এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় লাগামছাড়া হতে পারেনি করোনা’ তিনি আরও বলেন, ‘সুস্থ থাকতে সবাইকে এখন অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলে আমরা প্রত্যাশিত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারব। মাস্ক পরলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় চালু থাকলেও কোনো অসুবিধা হবে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলে সচল থাকবে অর্থনীতির চাকা। গা ছাড়া ভাব করা যাবে না। সবাইকে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর